Skip to main content

Posts

Showing posts from February 4, 2018

কলকাতা দাঙ্গা বা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস (The Great Calcutta Killing বা Direct Action Day). লেখক: সুরঞ্জন দাস

কলকাতা দাঙ্গা, ১৯৪৬  : ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় সংঘটিত একটি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। এ সহিংসতা ভারতের হিন্দু ও মুসলমান দুটি বৃহৎ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান ঘৃণা ও অবিশ্বাস থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্টকে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। উপমহাদেশের সর্বত্র মুসলমানগণ ওই দিন সকল কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে, হিন্দু জনমত পাকিস্তান-বিরোধী শ্লোগানকে কেন্দ্র করে সুসংগঠিত হতে থাকে। বাংলার কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ তেমন একটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। কিন্তু যেহেতু দলের অধিকাংশ সমর্থক ছিল হিন্দু, তাই কংগ্রেস সদস্যদের একটি অংশ পাকিস্তান আন্দোলনকে আসন্ন বিপদ হিসেবে উপলব্ধি করে হিন্দুদের একাত্মতা বিষয়ে প্রবল অনুভূতি প্রকাশ করার প্রয়াস পায়। তাদের প্রচারণা নিঃসন্দেহে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের বিরুদ্ধে হিন্দুদের চেতনাকে প্রজ্বলিত করেছিল। বিশেষত লীগ মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় থাকার কারণে ওই দিবস বাংলায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ১৬ আগষ্ট ভোরে উত্তেজনা শুরু হয় যখন লীগের স্বেচ্ছাসেবকেরা উত্তর কলকাত...

চানক্য-পণ্ডিতের কৌটিল্য-তত্ত্ব ইতিহাসের টেরাকোটায় লেখক: রণদীপম বসু

‘মন খাঁটি হলে পবিত্র স্থানে গমন অর্থহীন।’ এই দুর্দান্ত উক্তিটির বয়স দু’হাজার বছরেরও বেশি, প্রায় আড়াই হাজার বছর। এটা চানক্য-শ্লোক বা বাণী। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কথাটা কতোটা বিশ্বাসযোগ্য ? যদি বলি এর বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য ? একযোগে হামলে পড়বেন অনেকেই। বিশ্বাসযোগ্যই যদি না হবে তো আড়াই হাজার বছর পেরিয়ে এসেও কথাটা এমন টনটনে থাকলো কী করে ! আসলেই তা-ই। কথাটায় একবিন্দুও ফাঁকি দেখি না। হয়তো আমরাই মানি না বলে। অথবা অক্ষরে অক্ষরে এতোটাই মেনে চলি যে, জানান দেবার আর বাকি থাকে না- আমাদের মনটাই ফাঁকি, ওখানে খাঁটি বলে কিছু নেই। আর এজন্যেই কি পবিত্র স্থানে গমনের জন্য হুমড়ি খেয়ে আমাদের মধ্যে এমন হুড়োহুড়ি লেগে যায় ? অসুস্থ হলে যেমন আমরা হন্যে হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটি, এটাও সেরকম। খোশগল্প করার নিয়ত না হলে সুস্থাবস্থায় কেউ কি ডাক্তারের কাছে যান ! চানক্যের আরো কিছু বাণী- "বিষ থেকে সুধা, নোংরা স্থান থেকে সোনা, নিচ কারো থেকে ভালো এবং নিচু পরিবার থেকে শুভ-লক্ষণা স্ত্রী- এসব গ্রহণ করা সঙ্গত।” "মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।” ...

“মেরী ঝাঁসি দুংগী নহী।”- রানি লক্ষ্মীবাঈ

“মেরী ঝাঁসি দুংগী নহী।”- রানি লক্ষ্মীবাঈ। চলুন ফিরে দেখি তাকে -} সময়টা ১৮৫৭-৫৮সাল। মধ্যভারতে ঝাঁসি ছিল একটি সমৃদ্ধ ছোট্ট স্বাধীন মারাঠা রাজ্য। এর চারদিকে ঘিরে ছিল ব্রিটিশানুগত রাজপুত রাজ্যগুলি।প্রবল পরাক্রান্ত বলে পরিচিত মারাঠা রাজ্য গোয়ালিয়র,ইন্দোর নিরাপদে থাকার জন্য ব্রিটিশের মিত্র হয়েছিল। ভুপালের বেগমও সে’সময়ে ইংরেজ আনুগত্যের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিলেন। শুধু ঝাঁসির বিধবা রানি লক্ষ্মীবাঈ ছিলেন ব্যতিক্রম।নিজের দত্তক পুত্রের উত্তরাধিকার তথা ঝাঁসির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।তখন নানাসাহেব,তাঁতিয়া টোপি, বাণপুরের রাজা প্রমুখ কয়েকজন ছোটো ছোটো রাজ্যের শাসক আর ঝাঁসির অগণিত বুন্দেলখণ্ডি প্রজা,এরা রানির স্বাধীনতার লড়াইকে স্বাগত জানিয়েছিল।সেইসঙ্গে রানির আহ্বানে সারা দিয়েছিল আফগান ও পাঠান সেনারাও। জাতিধর্ম নির্বিশেষে রানির প্রতি প্রজাদের অকুণ্ঠ সমর্থন দেখে ভয় পেল ইংরেজ শাসকেরা। রানির আদর্শে মধ্যভারতে গড়ে ওঠা একটি ব্যাপক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সম্ভাবনাকে সমূলে বিনাশ করতে তৎপর হল তারা। সঙ্গে পেয়েছিল কিছু আরাম আর ব্যসনপ্রিয় কিছু বুন্দেলখণ্ডি আর কিছু দেশিয় রাজাকে। রানির সাহস...

তিতুমীর (সংগৃহীত)

ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর শহীদ হন। তিনি তিতুমীর নামেই বেশি পরিচিত। জমিদার ও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে তার নির্মিত দুর্গ বাঁশের কেল্লা এ অঞ্চলের স্বাধীনতাকামীদের যুগে যুগে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহাকুমার চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মীর হাসান আলী ও মা আবেদা রোকাইয়া খাতুন। তার পূর্বপুরুষ সৈয়দ শাহাদাত আলী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে এ অঞ্চলে আসেন। তিতুমীরের পড়াশোনার হাতেখড়ি বাবার কাছে। গ্রামের ওস্তাদের কাছে উর্দু, আরবি, ফারসি, বাংলা ও ধারাপাত শেখেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মুষ্টিযুদ্ধ, লাঠিখেলা, তীর ছোড়া ও তলোয়ার চালনায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। ১৮০১ সালে কুরআনে হাফেজ হন এবং হাদিস বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। সেই সঙ্গে বাংলা, আরবি ও ফারসি ভাষা, দর্শন ও কাব্যশাস্ত্রে সমান দক্ষতা অর্জন করেন। এর আগে ও পরে তিনি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। ১৮০৮ থেকে ১৮১০ সালের দিকে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতা শহরে যান। সেখানে তিনি কুস্তি প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিতেন। কুস্তি লড়...

স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবী রাসবিহারী বসু লেখক: প্রতাপ চন্দ্র সাহা

স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবী রাসবিহারী বসু (জন্মঃ- ২৫ মে, ১৮৮৬ – মৃত্যুঃ- ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৫) ১৯১১ সালে ভারতের বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ দিল্লির দরবারে ঘোষণা করেন, ১৯১২ সালে ভারতের সমস্ত প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি শোভাযাত্রা করবেন। ঘোষণা অনুযায়ী ১৯১২ সালের শীত কালে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি কুইন্স গার্ডেন হয়ে চাঁদনীচক দিয়ে দেওয়ান-ই-আমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাজ্যের সকল মানুষ এই শোভাযাত্রা দেখছেন। বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ সস্ত্রীক হাতির পিঠে বসে এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর পাঠানো ষোড়শী ছদ্মবেশী একটি বালিকা লীলাবতী (বসন্ত কুমার বিশ্বাস) বড়লাটকে মারার জন্য মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ভবনে বোমা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। অসংখ্য মহিলা সূরম্য পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ভবনের তৃতীয় তলায় শোভাযাত্রা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। লীলাবতী চাদর গায়ে মহিলাদের মাঝে মিশে গেলেন। ইতিমধ্যে শোভাযাত্রাটি ভবনের প্রায় নিকটে চলে আসে। ন্যাশনাল ব্যাংক ভবনের সম্মুখের আরেকটি ভবনে রাসবিহারী বসু সবকিছু সর্তকতার সাথে ত...

বাঙালি বিপ্লবীর প্রেমে বাঁধা পড়েছিলেন জাপানি যুবতী

১৯১৬-র ১২ ডিসেম্বর। ভারতের লাটসাহেব তথা ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জকে হত্যার চেষ্টা করে গোটা দুনিয়ায় হইচই ফেলে দেন রাসবিহারী বসু। কোন পরিস্থিতিতে এ ঘটনা, কী হয়েছিল তার পর— ঘটনার শতবর্ষপূর্তিতে ফিরে তাকালেন অশোক সেনগুপ্ত। মূলত ১০০ বছর আগের কথা। টোকিওর রেইনানসাকা থেকে অন্ধকারে ছদ্মবেশী কয়েক জন যুবা এল শিনজুকু শহরে। দোকান-বাড়ি ‘নাকামুরায়া’-র পিছনে ছিল নির্জন একটা ভুতুড়ে ভবন। সেটির দোতলায় এক গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিল দুই বাঙালি। ওঁদের একজন রাসবিহারী বসু। লর্ড হার্ডিঞ্জকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল ওঁর বিরুদ্ধে। বেশ কিছু দিন ভারতের নানা জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর গোপনে তিনি পাড়ি দেন জাপানে। কোন পরিস্থিতিতে লর্ড হার্ডিঞ্জকে হত্যার ষড়যন্ত্র আঁটছিলেন রাসবিহারী বসু? আলিপুরের বোমা মামলায় গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ১৯০৮ সালেই কলকাতা ছাড়েন তিনি। দেহরাদূনে গিয়ে ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের হেড ক্লার্কের একটি কাজ যোগাড় করেন। সেখানে গিয়ে যতীন মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) আর ‘যুগান্তর’ গোষ্ঠীর অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ষড়যন্ত্র আঁটকে থাকেন। ঠিক হয়, ব্রিটিশরাজকে কড়া বার্তা দিতে সরিয়ে দেওয়া...