Skip to main content

“মেরী ঝাঁসি দুংগী নহী।”- রানি লক্ষ্মীবাঈ

“মেরী ঝাঁসি দুংগী নহী।”- রানি লক্ষ্মীবাঈ। চলুন ফিরে দেখি তাকে -}
সময়টা ১৮৫৭-৫৮সাল। মধ্যভারতে ঝাঁসি ছিল একটি সমৃদ্ধ ছোট্ট স্বাধীন মারাঠা রাজ্য। এর চারদিকে ঘিরে ছিল ব্রিটিশানুগত রাজপুত রাজ্যগুলি।প্রবল পরাক্রান্ত বলে পরিচিত মারাঠা রাজ্য গোয়ালিয়র,ইন্দোর নিরাপদে থাকার জন্য ব্রিটিশের মিত্র হয়েছিল। ভুপালের বেগমও সে’সময়ে ইংরেজ আনুগত্যের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিলেন।
শুধু ঝাঁসির বিধবা রানি লক্ষ্মীবাঈ ছিলেন ব্যতিক্রম।নিজের দত্তক পুত্রের উত্তরাধিকার তথা ঝাঁসির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।তখন নানাসাহেব,তাঁতিয়া টোপি, বাণপুরের রাজা প্রমুখ কয়েকজন ছোটো ছোটো রাজ্যের শাসক আর ঝাঁসির অগণিত বুন্দেলখণ্ডি প্রজা,এরা রানির স্বাধীনতার লড়াইকে স্বাগত জানিয়েছিল।সেইসঙ্গে রানির আহ্বানে সারা দিয়েছিল আফগান ও পাঠান সেনারাও।
জাতিধর্ম নির্বিশেষে রানির প্রতি প্রজাদের অকুণ্ঠ সমর্থন দেখে ভয় পেল ইংরেজ শাসকেরা। রানির আদর্শে মধ্যভারতে গড়ে ওঠা একটি ব্যাপক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সম্ভাবনাকে সমূলে বিনাশ করতে তৎপর হল তারা। সঙ্গে পেয়েছিল কিছু আরাম আর ব্যসনপ্রিয় কিছু বুন্দেলখণ্ডি আর কিছু দেশিয় রাজাকে।
রানির সাহস, দৃঢ়তা আর স্পষ্টবাদিতাকে ভয় পেত ইংরেজ সরকার। রানির ক্ষমতাকে খর্ব করার জন্য লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে, দত্ত্বক গ্রহণ বেআইনি ঘোষণা করে স্বাধীন রাজ্য ঝাঁসিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করলেন। ১৮৫৪ সালের ১৬ই মার্চ ঝাঁসির রাজসভায় প্রকাশ্যে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করতেই চিকের আড়াল থেকে স্পর্ধাব্যঞ্জক সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছিলেন রানি। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন “মেরী ঝাঁসি দুংগী নহী।”
অতএব দুঃসাহসী স্বাধীনচেতা রানিকে দমন করার প্রস্তুতি শুরু করে দিল ইংরেজ। আর ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রানির সংগ্রামের মানসিক ও বাহ্যিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল নীরবে।যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী রানির বিশ্বাস ছিল যে স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে রাজ্যের প্রতিটি মানুষের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রশিক্ষার প্রয়োজন। কারণ বারবার পার্শ্ববর্তী দতিয়া আর ওরছা রাজ্যের আক্রমণে গ্রামাঞ্চলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।
তিনি জানতেন যেকোন সামাজিক অস্থিরতার সময় দুর্বৃত্তদের সহজ শিকার হয় মেয়েরা আর শিশুরা। সেইমত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। তৈরি করেছিলেন সশস্ত্র মহিলা সেনাদল,“দুর্গাবাহিনী”। এই নারীবাহিনীর আদর্শেই পরবর্তীকালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গড়ে তুলেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের “ঝাঁসি রানি বাহিনী”। এছাড়া গড়ে তুলেছিলেন এক সুদক্ষ গুপ্তচর বাহিনী, যার কথা ইংরেজদের লেখাতেই বারবার উল্লিখিত হয়েছে। কেল্লার ভিতরের ছায়াচ্ছন্ন, নির্জন বিশাল বাগানে রানি নিজে নিয়মিত মেয়েদের নিয়ে অস্ত্রচালনা অভ্যাস করতেন। ঘোড়ার পিঠে বসে চক্রাকারে ঘোরা, সরু পরিখা, খাদ পেরিয়ে যাওয়া, আসন ছাড়াই ঘোড়ার পিঠে চড়া, প্রভৃতি অভ্যাস করাতেন। এই দুর্গাবাহিনীর মেয়েদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ও কৌশলী। এঁদের মধ্যে যাঁরা রানির ছায়াসঙ্গিনী হয়ে উঠেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন কাশীবাঈ, সুন্দরবাঈ, জুহীবাঈ, গঙ্গুবাঈ, হীরা কোরিন, মোতি নাটকওয়ালি,আর সর্বোপরি ছিলেন এই লেখার নায়িকা ঝলকারি কোরিন। রানিসাহেবাকে অনুকরণ করে তিনি সব শিখে নিয়েছিলেন, প্রয়োজনে স্বাধীন সিদ্ধান্তও যে নিতে শিখেছিলেন তার প্রমাণ দিয়েছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। ঝলকারি দেখতে ছিলেন অবিকল রানির মত। দামি পোশাকে সেজেগুজে থাকলে চট করে দেখলে যে কেউ রানি বলে ভুল করত। এই চেহারার মিলটুকুকে সম্বল করে যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি রানিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন, আর নিজে যুদ্ধ করে ইংরেজবাহিনীকে কেল্লার মুল ফটকের সামনে আটকে রেখেছিলেন। সেই যুদ্ধের সমস্ত পরিকল্পনা ছিল তাঁরই। যুদ্ধের সময় তাঁর বীরত্বের কথা বলার আগে তাঁর পরিচয় দিয়ে নিই।
ঝলকারি কোরিন ছিলেন ঝাঁসির কেল্লা থেকে খানিকটা দূরে ভোজিলা গ্রামের মেয়ে। ছেলেবেলায় মা যমুনাবাঈয়ের মৃত্যুর পর বাবা সদোভর সিং একাই মেয়েকে বড়ো করে তোলেন। অল্প কিছু লেখাপড়াও শিখিয়েছিলেন তাঁকে বাড়িতে। ঘরের কাজের সঙ্গে ঝলকারিকে পোষা ছাগলও চরাতে নিয়ে যেতে হত।
বনের কাছে বাস,তাই বন্যপশুর আক্রমণ মাঝে মাঝেই হত। এছাড়া সে’সব এলাকায় লুঠেরা ডাকাতরাও মাঝে মাঝেই গ্রামে হানা দিত। তাই বাবা তাঁকে বন্দুক, তরোয়াল এসব চালাতে শিখিয়েছিলেন আর শিখিয়েছিলেন ঘোড়ায় চড়া।
ছোটো থেকেই ঝলকারি খুবই সাহসী আর শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন। ছেলেবেলায় একদিন ছাগল চড়ানোর সময় একটা চিতা ছাগলকে আক্রমণ করতে এলে হাতের লাঠি দিয়েই চিতার নাকে এমন আঘাত করেছিলেন যে চিতাটি জ্ঞান হারায়, তখন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সেটাকে মেরে ফেলেছিলেন। আর একবার গ্রামের এক ধনীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। বন্দুক নিয়ে ডাকাতদের আক্রমণ করে ঝলকারি ডাকাত তাড়িয়ে সেই বাড়ির লোকজনের ধন ও প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর তাঁর নামডাক আর সাহসের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষও ঝলকারিকে তাঁর পরোপকারিতার জন্য খুব ভালোবাসত।
ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সেই ধনী মানুষটির উদ্যোগে ঝাঁসির রানির গোলন্দাজবাহিনীর এক যুবক তোপদার পূরণ সিংহের সাথে ঝলকারির বিয়ে হয়ে যায়। যোগ্যের সঙ্গে যোগ্যের মিলন হল। বিবাহিত ঝলকারি স্বামীর সঙ্গে এলেন কেল্লায়, ঠাঁই হল মেয়েদের মহলে,আর ঝাঁসির রানি দেখা পেলেন স্বাধীনতাকামী, সাহসী, আত্মদানে প্রস্তুত এক নারী যোদ্ধাকে যিনি রানির ছায়াসঙ্গিনী,আর শুভাকাঙ্খী ছিলেন আজীবন। এদিকে চারিদিকে শত্রুবেষ্টিত রানির অধিকার খর্ব করে তাঁকে মাসোহারার উপর নির্ভর করে বাঁচতে বাধ্য করেছিল ইংরেজ। নিরুপায় রানি আপাতশান্তভাবে থেকে ধীরে ধীরে ঝাঁসিকে তৈরি করছিলেন দীর্ঘস্থায়ী অপ্রতিরোধ্য সংগ্রামের জন্য। এমন সময় ১৮৫৭ সালে দেশে জ্বলে উঠল ইংরেজবিরোধী মহাবিদ্রোহের আগুন। উত্তর ভারতের বিদ্রোহী সিপাহিরা দিল্লীতে বাহাদুরশাহি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সাফল্যে উদ্দীপিত হয়ে বিদ্রোহের বহ্নিশিখা বয়ে নিয়ে মধ্যভারতের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তাঁদের প্রধান লক্ষ স্বাধীনতাপ্রিয় রাজ্য ঝাঁসি।
বিদ্রোহীদের আগমনের সংবাদে ভীত হয়ে ঝাঁসির কেল্লায় আশ্রয় নেওয়া ইংরেজদের ৬৫ জনকে হত্যা করে উন্মত্ত সিপাহিরা, ঝাঁসির গায়ে কুখ্যাত ‘ঝাঁসির হত্যাকান্ড’এর কালিমা লেপন করল। রানির কাছ থেকেও জোর করে অনেক সম্পদ কেড়ে নিয়ে ফিরে গেল এই সিপাহির দল। অথচ হত্যাকান্ডের দায় চাপল রানির উপর।
ইংরেজ ঝাঁসির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। প্রথমে ওরছা রাজ্যকে দিয়ে ঝাঁসি আক্রমণ করিয়ে, সেই সুযোগে জেনারেল হিউরোজ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঝাঁসি আক্রমণ করতে এগোতে লাগলেন।
রানিও প্রতিরোধের ব্যবস্থা দৃঢ় করলেন। প্রাচীর ঘেরা ঝাঁসিতে প্রবেশের ৮টি প্রধান ফটক সুরক্ষিত করা হল, বুরুজের উপর ও দরজার দুপাশে প্রহরী রেখে, কেল্লার বিভিন্ন বুরুজের উপর বসান হল ভবানীশঙ্কর, কড়কবিজলী, সমুদ্রসংহার, নলদার প্রভৃতি শক্তিশালী কামানগুলিকে। ১৮৫৮ সালের ২১শে মার্চ কেল্লার সামনে এসে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়লেন হিউরোজ। দক্ষিণের ফটকের দিকে উঁচু টিলার উপর থেকে যুদ্ধ করতে গিয়ে কেল্লার ধোঁয়াবিহীন কামান ঘনগর্জের গোলায় ইংরেজরা নাজেহাল হতে লাগল বেশি।
ঝলকারির নেতৃত্বে মেয়েরা গোলন্দাজদের গোলা এগিয়ে দিচ্ছিল। কোন গোলন্দাজ আহত হলে কেউ তাকে সরিয়ে নিচ্ছিল। বদলে কাছের নারী সৈনিকটিই কামান দাগতে শুরু করছিল।
পাঁচ-ছ’দিন যুদ্ধের পর বিশ্বাসঘাতকদের সাহায্য নিয়ে প্রাচীরের দুর্বল জায়গা দিয়ে ইংরেজ সৈন্য টপকিয়ে ভিতরে ঢুকে ফটক খুলতে চেষ্টা করছিল। ব্যাপারটা নজর করলেন ঝলকারী। স্বামী পূরণ সিংহকে সেদিকে গোলাবর্ষণ বাড়াতে বললেন, নিজেও কাছেই রইলেন।
এদিকে ইংরেজের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের আক্রমণে রানিবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে লাগল। অবরোধের ফলে কেল্লায় খাদ্যাভাব ও জলাভাব দেখা দিয়েছে তখন। রানি সমর পরিষদের বৈঠক ডাকলেন। সকলে একমত হয়ে বললেন এ অবস্থায় বাইরে থেকে সাহায্য প্রয়োজন। এ সময় রানি ধরা পড়লে সব চেষ্টা বিফলে যাবে। তাই রানিকে যে করে হোক পালিয়ে কেল্লার বাইরে যেতে হবে।
ঝলকারি বাঈ এইসময় তাঁর দুঃসাহসী পরিকল্পনা পেশ করলেন। রানি প্রথমে সবাইকে ছেড়ে পালাতে রাজি না হলেও পরে মেনে নিলেন। ঝলকারি ঠিক করে দিলেন নারীবাহিনীর কে কে রানির সঙ্গে যাবে, কোন কোন যোদ্ধারা তাঁর সঙ্গী হবেন।
এবারে তিনি কেল্লার পিছন দিক দিয়ে রাজপুত্র দামোদরকে সঙ্গে নিয়ে হাতিশালার মধ্য দিয়ে রানির পালাবার সব ব্যবস্থা করলেন প্রথমে। তাঁর পরিকল্পনা, রানি নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি নিজে রানির বেশে কেল্লার সামনের দিকে সৈন্যসমাবেশ করে ইংরেজ সৈন্যদের টেনে আনবেন সেখানে, তাদের ব্যস্ত রাখবেন যুদ্ধে। ঝলকারির পরিকল্পনামত কেল্লার সামনের দিকে রানির সৈন্যরা জড়ো হতে লাগল। খবর ছড়িয়ে গেল রানি নিজে সম্মুখসমরে আসছেন। হিউরোজ রানিকে সম্মুখযুদ্ধে বন্দি করতে কেল্লার সামনের দিকে সেনাসমাবেশ করলেন। এই সময়ের মধ্যে পুত্রকে পিঠে বেঁধে নিয়ে আর সঙ্গী সেনাদের নিয়ে কেল্লার পিছন দিক দিয়ে নিজের ঘোড়া সারেঙ্গীর পিঠে চড়ে প্রাচীর থেকে লাফ দিলেন আসল রানি, যা ইতিহাসে “দ্য লিজেন্ডারি লিপ অফ রানি লক্ষীবাঈ” বলে বিখ্যাত হয়ে আছে আজও। এদিকে নকল রানি ঝলকারি যোদ্ধার বেশে, ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়ে এলেন সামনের দরজা দিয়ে। উদ্দেশ্য রানি লক্ষ্মীবাঈকে নিরাপদ দূরত্বে কাল্পীতে পৌঁছুবার মত যথেষ্ট সময় দেয়া। প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করে ইংরেজ বাহিনীকে কেল্লার বাইরেই আটকে রাখলেন। তাঁর নির্দেশমত আর এক গোলন্দাজ পুবদিকের বুরুজের মাথায় বসানো শক্তিশালী কামান কড়কবিজলী থেকে গোলাবর্ষণ করে প্রাসাদের দিকে আগুয়ান ইংরেজদের বিপর্যস্ত করতে লাগল। ৪ঠা এপ্রিল রানি কেল্লা ছেড়ে বেড়িয়েছিলেন। সারারাত ঘোড়া চালিয়ে রানি তখন ১০০ মাইল দূরে ভাণ্ডীরে পৌঁছে গেছেন। এদিকে এক বিশ্বাসঘাতক ঝলকারিকে চিনতে পেরে হিউরোজকে চিনিয়ে দিলেন,এ আসল রানি নয়। সঙ্গে সঙ্গে ঝলকারি গুলি করলেন তাকে, নিহত হল এক বিশ্বাসঘাতক।
হিউরোজ এরপর তাঁকে বন্দি করলেন। ছলনা করার জন্য তাঁকে শাস্তির কথা বলতেই বীরদর্পে ঝলকারি বললেন, “গুলি করো আমাকে।” তখন পাগল ভেবে তাঁকে এক তাঁবুতে বন্দি করে রাখা হল। কিন্তু বেশিক্ষণের জন্য নয়। রাত নামতেই অন্ধকারের আড়াল নিয়ে পালালেন ঝলকারি।
পরদিন সকালে বাহিনী নিয়ে কেল্লার দিকে এগোতে গিয়ে হিউরোজ দেখলেন প্রাচীরের মাথায় দাঁড়িয়ে স্বামী পূরণ সিংহকে গোলার যোগান দিচ্ছেন ঝলকারি। হঠাৎ এক গোলার আঘাতে স্বামী আহত হয়ে পড়ে গেলে ব্যস্ত না হয়ে ঝলকারি স্বামীর কামান থেকেই ইংরেজদের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করলেন। কিন্তু কিছু পরে ঝলকারি নিজেও আহত হয়ে পড়ে গেলেন। শোনা যায় এর পরেও ঝলকারি বেঁচে ছিলেন ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত। রানির সঙ্গে মিলিতও হয়েছিলেন। গোয়ালিয়রের যুদ্ধে রানি মারা গেলে তাঁর মরদেহ সৎকারও করেছিলেন অন্য নারীযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে। ইতিহাসের পাতায় তাঁর আত্মত্যাগ স্থান না পেলেও বুন্দেলখন্ডের আকাশে বাতাসে, গানে, গল্পে, গাথায়,তাঁর কথা শোনা যায়।তাঁর নামে অনেক স্কুল কলেজ আছে বুন্দেলখন্ডে। ২০০১ সালে ভারত সরকার তাঁর নামাঙ্কিত একটি চার টাকার ডাকটিকিট বের করেছেন।
(সংগৃহীত)

Comments

Popular posts from this blog

আদি সমাজতন্ত্র বাদী বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র লেখক- সুমন্ত ঘোষ

সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে শর্ট প্রশ্ন

১   ) হিট্রো - গ্রাফি   কথার   অর্থ   কি                                                                         উত্তরঃইতিহাস   চর্চা ২ )  ইতিহাসের   জনক কাকে বলে                                                                        উত্তরঃহেরোডোটাস ...

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কতটা 'বৈপ্লবিক' ছিল? লেখক: সুমন্ত ঘোষ

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন।  বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ...