Skip to main content

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কতটা 'বৈপ্লবিক' ছিল? লেখক: সুমন্ত ঘোষ

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন।

 বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষী পিকোদেল্লা মিরানদোলা। তবে সমসাময়িক পন্ডিত ফিসিনো ও পল্টানো প্রমুখরা তবুও গ্রহ-নক্ষত্র তথা জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রভাবকে পুরোপুরি অবহেলা ও অস্বীকার করতে পারলেন না। অপরসায়নবিদরাও গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব কিছুটা মেনে নিয়েছিলেন, আবার কিছু বৈজ্ঞানিক মনে করতেন যে ধর্ম চারণ ও গবেষণা এক বিষয়।


আলোচ্য পর্বের বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানীদের অনেকেই বিজ্ঞান ও আবিষ্কারের ওপর খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাব মেনে নিয়েছিলেন। তারা বলেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যে গতি প্রকৃতি তার পশ্চাতে অবশ্যই কোন ঐশ্বরিক শক্তির অস্তিত্ব বা দৈব শক্তির অস্তিত্ব আছে। সেই অদৃশ্য শক্তিই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের চালিকাশক্তি এবং এর মালিক। এ বিষয়ে আমাদের একটা কথা বলতে হয় যে, স্বয়ং নিউটন ছিলেন আস্তিক। নিউটন তার রচিত গ্রন্থ প্রিন্সিপিয়া-তে লিখেছিলেন সূর্য, গ্রহ এবং ধুমকেতু নিয়ে অসীম সুন্দর জগৎ গড়ে উঠেছে; তা পরিচালিত হচ্ছে অসম্ভব মেধাবী ও ক্ষমতাসম্পন্ন এক সত্তার আদেশে।  সপ্তদশ শতকের বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা এমন ছিল যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারে। আবার আমরা যদি রবার্ট বয়েল দিকে তাকাই তবে দেখবো তার বিজ্ঞান সাধনায় প্রোটেস্টান্ট মতবাদের একটা প্রভাব রয়েছে।

মূলত এই সকল বাধা ও সীমাবদ্ধতার জন্যই আমরা বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক বলতে একটু কুন্ঠিত বোধ করি; সে সম্পর্কে আমাদের মনে সংশয় অবকাশ থেকে যায়। তবে বৈজ্ঞানিক চেতনা তথা চিন্তাধারার সামগ্রিক বিচারে একে আমরা  অবশ্যই বৈপ্লবিক বলতে পারি।

তথ্যসুত্র: বিবিধ

Comments

Popular posts from this blog

আদি সমাজতন্ত্র বাদী বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র লেখক- সুমন্ত ঘোষ

সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে শর্ট প্রশ্ন

১   ) হিট্রো - গ্রাফি   কথার   অর্থ   কি                                                                         উত্তরঃইতিহাস   চর্চা ২ )  ইতিহাসের   জনক কাকে বলে                                                                        উত্তরঃহেরোডোটাস ...