Skip to main content

ইতিহাস : একটি প্রাথমিক পরিচয় :: লেখক- সুমন্ত ঘোষ



   মানুষ ও তার সমাজ যে অবস্থায় আজ উপনীত হয়েছে তাকে কখনোই আকস্মিক উপাধিতে ভূষিত করা যেতে পারে না। তাই এই বর্তমান সমাজকে আমরা অতীতের একাধিক পরিবর্তনের নামান্তর রূপে অভিহিত করতে পারি। এই বর্তমানের সৃষ্টি হয়েছে অতীতের গর্ভ থেকে তাই আগে আমাদেরকে অতীতকে জানতে হবে নাহলে বর্তমানের অনেক কিছুই আমাদের কাছে অধরা রয়ে যাবে।অতীততের জ্ঞান না অর্জন করলে বর্তমানের অনেক কিছুকেই যথোচিত বিশ্লেষণের আওতায় আনা অসম্ভব হয়ে পড়বে বা বিশ্লেষিত করার সক্ষমতা অর্জনেও আমরা অক্ষম হব। তাই অতীতকে আগে জানা উচিত আর এই অতীতের জ্ঞান লাভেই সাহায্য করে থাকে ইতিহাস ।


     ইতিহাস বা History শব্দটির উৎপত্তি স্থল হল গ্রিক শব্দ 'Historie' থেকে, যার অর্থ সযত্ন অনুসন্ধান, জিজ্ঞাসা বা তদন্ত। 'Historie' বা 'ইতিবৃত্ত' ছিল  বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (Herodotus) কর্তৃক রচিত গ্রন্থের শিরোনাম, তাই আজ তাকে ইতিহাসের পিতা বা জনক অভিধায় সম্মানিত করা হয়ে থাকে । এই গ্রন্থে তিনি পদ্যরীতিকে দূরে রেখে গদ্যরীতির হাত ধরে মানুষের অতীত কর্মের বিবরণকে লিপিবদ্ধ করেন। হেরোডোটাস মানুষের অতীত কার্যাবলীকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরার পক্ষপাতী ছিলেন। অতীতকে লিপিবদ্ধ করে ভবিষ্যত গ্রিক প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে  চেয়েছিলেন তিনি, আর তাই তার 'ইতিবৃত্ত'-এর বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ অব্দের বিখ্যাত ম্যারাথনের যুদ্ধ, যে যুদ্ধে গ্রিকদের কাছে পারসিকরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল। হেরোডোটাস রচিত 'ইতিবৃত্ত'-তে মানুষ পরিগণিত হয়েছে  যুক্তিবাদী জীব হিসেবে। তিনি মনে করতেন, মনুষ্য কর্তৃক সম্পাদিত কোনো কার্যকে যথাযথভাবে তুলে ধরার সাথে সাথে একজন ঐতিহাসিকের উচিত ঐ কার্য ঘটার পশ্চাতের কারণগুলির উপরও ভালোভাবে নজর নিক্ষেপ করা। মানুষ ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে উপস্থিত সম্পর্কের সম্পূর্ণ প্রেক্ষিতকে তুলে ধরে তিনি অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন।

     ইতিহাস হলো মানবসমাজের একটা অতীত বিবরণ। এটা হল, 'The study of man in time, an inquiry 
into the past based on evidence'। যুগ যুগ ধরে মনুষ্য কর্তৃক সম্পাদিত অতীত কার্যাবলীর বিবরণ ও ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে ইতিহাস; যুগ যুগ ধরে মানুষ কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তারই অন্বেষণ ও কল্পনা হয় ইতিহাসের মধ্যে। ইতিহাস একপ্রকার গভীর জ্ঞান, যে জ্ঞান দ্বারা মানুষ ও তার প্রকৃতিকে যথার্থভাবে বোঝা সম্ভব হয়। এটা একইসাথে মানুষের কর্মকান্ড ও তার চিন্তা-ভাবনার হিসেব রাখে। মানুষ কি চিন্তা করছে, কেন করছে, সেই চিন্তার দরুন নিজেকে কোন কাজে ব্রতী করছে ইত্যাদি সবকিছুই ইতিহাসের আলোচনার গণ্ডির মধ্যে পড়ে। অতীত মানুষের কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে নব প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ  করে ইতিহাস। ইতিহাস কোনো বিশেষ মানুষের জন্য নয়, তা হল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমভাবে সকল মানুষের কর্মের একটি নিবন্ধন। ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলে, ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। একজন ব্যক্তির জীবনের ইতিহাস রচনা করতে হলে তার শৈশবকে আলোচনা করেই বার্ধক্যে যাওয়া চলবে না, এক্ষেত্রে তার কৈশোর ও যৌবনের সময়কালও আলোচনার মধ্যে আনতে হবে নাহলে কখনোই যথার্থ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হবে না । বিচ্ছিন্ন নয় বরং সংযুক্ত ভাবেই সেই আলোচনাকে চালাতে হবে।

    তবে অতীত মানেই তা ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হবে তা বলা যাবে না ,বিষয়টা এতটাও সরল নয়। অর্থাৎ সব ইতিহাসকেই অতীত বলা যাবে কিন্তু সব অতীতকে ইতিহাস বলা যাবে না । অতীতে যে বিষয়গুলি হয়েছে বা ঘটেছে তা আমাদের পর্যবেক্ষণ বহির্ভূত ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তার কোনো লেখ্য বা প্রমান আমাদের হস্তগত হয়নি । তাই ইতিহাস হল, " subset of the past"। ইতিহাস হলো অতীতকে নিয়ে আলোচনা, কিন্তু এটা শুধুমাত্র অতীতের একটা অংশকে নিয়ে আলোচনা করবে এবং তা করবে যথাসম্ভব নৈর্ব্যক্তিকভাবে (Objectively)। এই কঠিন কাজটি যিনি করে থাকেন তাকে আমরা ঐতিহাসিক নামে সম্বোধন করে থাকি। অর্থাৎ মানব সভ্যতার বা মানুষের বিগত কর্ম, তা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় যাই হোক না কেন তা সযত্নে লিপিবদ্ধ করেন ঐতিহাসিক। এখন প্রশ্ন- এই ঐতিহাসিক আসলে কে ? এর উওরে বলব, যার মধ্যেই ইতিহাস বোধ বা চেতনা রয়েছে সেই ব্যক্তিই ঐতিহাসিকের মর্যাদা লাভ করতে পারেন, তবে তার মধ্যে কিছু আবশ্যিক গুণ থাকা বাঞ্ছনীয় , যেমন- তীক্ষ্ণ বিচার বুদ্ধি, যথার্থ আত্মউপলব্ধি, সুসংবদ্ধ ও নিরেপেক্ষ ইতিহাস রচনার মানসিকতা ইত্যাদি । এক্ষেত্রে বলে রাখি ঐতিহাসিক ও ইতিহাসবিদ্ এক নয় যদিও উভয়ই মানুষের অতীত কর্মকে নিয়ে আলোচনায় রত থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের পার্থক্য  হল জ্ঞানের পরিধি (Scope of  knowledge) নিয়ে। একজন ঐতিহাসিক যা জানবেন একজন ইতিহাসবিদ তার থেকে অবশ্যই বেশি জানবেন। তাই বলাযায় ইতিহাসবিদ্ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি অসাধারণ ইতিহাস বোধ ও অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারি।

     ইতিহাস হল তথ্যভিত্তিক একপ্রকার জ্ঞান। তথ্য ছাড়া ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। একজন ঐতিহাসিকের কাছে তথ্যই ইতিহাস রচনা করার প্রধান এবং মূল উপকরণ।  এই তথ্যকে খোঁজা ঐতিহাসিকের দায়িত্ব, তবে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ের উপর প্রাপ্ত সব তথ্যই তার কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা পায় না। যে তথ্যগুলি বস্তুনিষ্ঠ, সর্বজনীন, যেগুলি প্রায় সব ঐতিহাসিকের কাছে সমভাবে গ্রহণযোগ্য তা-ই ইতিহাসের পাতায় স্থান লাভ করে আর যে তথ্যগুলি গুরুত্বহীন বা যার খুঁতশূণ্যতা (Accuracy) নিয়ে সংশয় থাকে তা ঐতিহাসিক বর্জন করে থাকেন। ইতিহাসে যেসব তথ্য ঐতিহাসিক কর্তৃক পরিবেশিত হবে তা কোনো প্রামাণ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত হতে হবে।  ঐতিহাসিককে উৎস নিয়ে গবেষণা করতে হলে তা একান্ত নিবিষ্ট মননে নিরপেক্ষভাবে করতে হবে। ঐতিহাসিক মনে মনে নিজেকে ঐ উৎসের সমকালীন সময়ে নিয়ে যাবেন এবং গভীর অনুসন্ধান, গবেষণা ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে উৎস হতে সঠিক তথ্য বের করে আনবেন। এই উৎসকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। যথা- মূল উৎস বা মৌলিক উৎস (Original Sources or Primary Sources) এবং দ্বৈতয়িক উৎস (Secondary Sources)। মৌলিক উৎস হল সেইসব উৎস যেগুলি অন্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ব্যতীতই উৎসের রূপ নিয়েছে, যেগুলি একান্তই স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে, যেসব উৎস থেকে ঐতিহাসিকরা সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে। যেমন- প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন(লিপি, মুদ্রা, ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি); ধর্মীয় সাহিত্য ( বেদ, ত্রিপিটক, ভগবতীসূত্র ইত্যাদি); ঐতিহাসিক সাহিত্য (রাজতরঙ্গিনী, হর্ষচরিত, আকবরনামা ইত্যাদি); সরকারি দলিল। এছাড়াও বিভিন্ন চিত্র তথা নকশা, মানচিত্র;  বিভিন্ন রূপকথা, অতিকথা, পালা, গান; সন্ধি বা চুক্তিপত্র, খবরের কাগজ ইত্যাদিও ইতিহাসে তথ্যের উৎস রূপে কাজ করে। অপরদিকে দ্বৈতয়িক উৎস হল সেগুলো যেগুলো মূল উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরিপূর্ণতা পেয়েছে অর্থাৎ যেগুলির জ্ঞানের ভিত্তি হল ঐ মূল উৎসগুলি। এর উদাহরণ হিসেবে আমরা আধুনিক ঐতিহাসিকদের যেকোনো গ্রন্থের কথা বলতেই পারি, যেমন- A. L. Basham এর 'The Wonder that was India' ।


     তথ্যের থেকেই ঐতিহাসিক তৈরি করেন ঐতিহাসিক তত্ত্ব। এক্ষেত্রে মতের বিভিন্নতা থাকতেই পারে কারণ একজন ঐতিহাসিক যে বিশ্লেষণী শক্তি দিয়ে তথ্যকে বিচার করে যে তত্ত্বে উপনীত হচ্ছে অন্যজন ভিন্ন বিশ্লেষণী শক্তিতে তথ্যকে বিচার করে ভিন্ন তত্ত্বে উপনীত হতেই পারেন। আর এর জন্যই আমরা 'ঐতিহাসিক বিতর্ক'কে দেখতে পাই। বিষয়টি একটা বাস দূর্ঘটনার মতো। প্রত্যক্ষদর্শীদের  সবাই একইভাবে দূর্ঘটনার ব্যাখ্যা করবে এমনটা না হওয়াই স্বাভাবিক। তথ্য থেকে ঐতিহাসিক সত্যকে উদঘাটন করবেন, তবে সব তথ্য সঠিক নয়, ভুল তথ্য ঐতিহাসিক বর্জন করেন। মনে রাখতে হবে, ঐতিহাসিক তথ্যের মাধ্যমে যে সত্যকে উদঘাটন করেন তা শ্বাশত চিরন্তন সত্য হতে পারে না। যদি কখনো নতুন সত্য উদঘাটিত হয় তবে পুরোনো সত্যটি পাল্টে  যায়। যেমন- আগে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে বৈদিক সভ্যতার উদাহরণ পেশ করা হত, কিন্তু এখন বৈদিক সভ্যতার থেকেও প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে আমরা হরপ্পা সভ্যতার কথা বলে থাকি, অর্থাৎ এখানে আমরা দেখছি ইতিহাসে সত্য পাল্টে যাচ্ছে। তবে সব সত্য যে পাল্টাবে তেমনটাও নয়। কিছু সত্য রয়েছে যেগুলি নিজেদেরকে চিরন্তন সত্যের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। যেমন- ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল অথবা বলা যায় ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়েছিল। এই ধরণের ঘটনার সময়কাল সমকালীন সব উৎসে একই রয়েছে এক্ষেত্রে দ্বিমত নেই। একজন সুস্থ, শিক্ষিত, দক্ষ ব্যক্তি কখনোই বলতে পারবে না যে, ১৯৭৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়েছিল বা সে কখনোই বলতে পারবে না, ১৫৬১ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল। অর্থাৎ  এগুলি শ্বাশত চিরন্তন সত্য, যা সকল ঐতিহাসিকের সমর্থন পুষ্ট।


     আবার বলাবাহুল্য, তথ্য সংগ্রহের যাবতীয় দায়দায়িত্ব যেহেতু ঐতিহাসিকের তাই তার হাত থেকে কোনো তথ্য যদি ছুটে যায় তবে তা যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন কখনোই ইতিহাসের পাতায় স্থান লাভ করতে পারবে না। পূর্বের যে হরপ্পা সভ্যতার উদাহরণ দিলাম তা এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের আগের সময়কালে হরপ্পা সভ্যতার কোনো চিহ্নই ইতিহাসে ছিল না, ভাবা হত বৈদিক সভ্যতাই ভারতের সবচেয়ে প্রাচীনতম সভ্যতা। কিন্তু বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এ ধারণা যেন পাল্টে গেল । বৈদিক সভ্যতার থেকে শুধুমাত্র  প্রাচীনই নয় বরং এক উন্নত সভ্যতা হিসেবে হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে আমরা পরিচয় ঘটানোর সুযোগ পেলাম, যেটা  ছিল   সুপ্রাচীন   সুমেরীয় ও  মিশরীয় সভ্যতার সমসাময়িক। তাই ড. মজুমদার তার "Ancient India" গ্রন্থে বলেছেন, "The discovery of this civilasation has almost revolutionized our conception of Indian history. At a single stroke the antiquityof Indian civilization has been pushed back to 3000 B.C., if not earlier still, and India now  rank almost with Sumer, Akkad, Babylon, Egypt, and Assyrian as a pioneer of human civilization." যদি ঐ বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঐতিহাসিকরা খননকার্যের মাধ্যমে করে হরপ্পা সভ্যতাকে বের করে না আনতেন তবে হয়ত আজও আমরা হরপ্পার মত এত বিশাল ও উন্নত সভ্যতার সাথে পরিচয় ঘটানোর সুযোগ পেতাম না। তাই একজন ঐতিহাসিককে চোখ-কান খুলে সদা সচেতনভাবে (Consciously) কাজ করা উচিৎ। তা নাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই ইতিহাসের মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। তবে মনে রাখতে হবে, অতীতের গর্ভে মানুষের বহু কর্ম লুকিয়ে আছে, সবগুলিই ঐতিহাসিকের গোচরের মধ্যে পড়ে না। হতে পারে গোচর বহির্ভূত কোনো কর্ম অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ঐতিহাসিকের অগোচরে থেকে যাওয়ায় তা নিজেকে ইতিহাসের পাতায় স্থান লাভ করাতে পারে না।


     ইতিহাস হল ঐতিহাসিকের অভিজ্ঞতার ফসল। এই দুটি অর্থাৎ ইতিহাস ও ঐতিহাসিক এমনভাবে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করেছে যে একটি না থাকলে অপরটির কোনো অস্তিত্বই থাকে না। এ সম্পর্ক  যেন গাছ ও তার শেকড়ের সম্পর্কের সদৃশ,  একটিকে ছাড়া অপরটি যেন মৃত । তথ্য ছাড়া ঐতিহাসিকের পক্ষে একচুলও এগোনো সম্ভব নয়। সুতরাং বলা যায়, 'ইতিহাস হল ঐতিহাসিক ও তথ্যের মধ্যেকার পারস্পরিক অবিচ্ছন্ন প্রক্রিয়া এবং বর্তমান ও অতীতের মধ্যেকার একটা সমীক্ষা, যার শেষ নেই'। ঐতিহাসিকে জানতে ও বুঝতে হবে অতীতের কোনো ক্রিয়া কেন ঘটেছিলো? যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ঐ ক্রিয়ার সাথে যুক্ত, তাঁর বা তাঁদের উদ্দেশ্যই বা কি ছিল? ঐতিহাসিক তার চিন্তা শক্তির মাধ্যমে এই কাজ সিদ্ধ করবেন। তাই আমরা বলতে পারি, 'সব ইতিহাসই চিন্তার ইতিহাস' অর্থাৎ, 'ইতিহাস হল ঐতিহাসিকের মনের সেই চিন্তার পুনঃরুপায়ন যার ইতিহাস তিনি লিখছেন'। ঐতিহাসিক যে সময়কার ইতিহাস রচনা করছেন সেই সময়টাকে তিনি মনে মনে উপলব্ধি করবেন। প্রথমাবস্থায় ঐতিহাসিক এবং তার তথ্যের মধ্যে একটা ব্যবধান থাকে। ঐতিহাসিক তার কল্পনা শক্তিকে আশ্রয় করে সত্যের প্রতি অটল থেকে সেই ব্যবধান দূর করেন ও ইতিহাস রচনায় একটা  সংহতি বোধের সৃষ্টি করেন। কল্পনাকে আশ্রয় করায় ঐতিহাসিক যেন সাহিত্যিকের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।  তবে একথা তাকে মাথায় রাখতেই হবে যে অযথা কল্পনার জালে তিনি যেন ইতিহাসকে না জড়িয়ে ফেলেন। ইতিহাস রচনা করবার সময় ঐতিহাসিকের আবেগপ্রবণ মনোভাব মোটেই আশানুরূপ নয়। আর যদি তাই হয় তবে ঐ ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠতা লাভে অক্ষম হয়। ইতিহাস রচনা করতে গেলে ঐতিহাসিকে নৈর্ব্যক্তিক নির্মোহ, পক্ষপাতহীন ব্যক্তি হতেই হবে।


     আলোচনার সাপেক্ষে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, ঐতিহাসিককে ইতিহাস রচনার জন্য নির্মোহ, পক্ষপাতশূন্য ও আবেগবর্জিত হতে হবে, তা নাহলে তিনি বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে পারবেন না। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, ঐতিহাসিক কি তা হতে পারেন? তার পক্ষে কি বস্তুনিষ্ঠ বা নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব? ইতিহাস কি বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে? এই  প্রশ্নগুলির উত্তর এককথায় দিতে হলে বলব- না, ইতিহাস সম্পূর্ণ  বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে না; আর ঐতিহাসিকের পক্ষেও  সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক হওয়াটা যেন সাধ্যাতীত কার্য সম, আর হবেনই বা কি করে যিনি ইতিহাস রচনা করেন অর্থ্যাৎ সেই ঐতিহাসিক তো একজন মানুষ। তাই মানুষের মধ্যে আবেগ, লোভ, পক্ষপাতিত্ব করার মানসিকতা ইত্যাদি তো থাকাই স্বাভাবিক। তিনি তো ধাতুনির্মিত যন্ত্র নন। ঐতিহাসিক সবসময় একই দৃষ্টিতে ইতিহাস রচনায় ব্রতী হবেন এমনটা ভাবা নিতান্তই অমূলক, কারণ ইতিহাস রচনার সময় ঐতিহাসিকে তার সমসাময়িক সময় কিছুটা হলেও প্রভাবিত করে। যুগের সাথে সাথে ঐতিহাসিকের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হয়। আর তাই গোলাপের যুদ্ধকে বর্ণনা করতে হলে আধুনিক যুদ্ধের প্রতিচ্ছবিটা  ঐতিহাসিকের মাথায় আসতেই পারে। একজন ঐতিহাসিকের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও তাকে অবশ্যই প্রভাবিত করে। তাই ঐতিহাসিক E. H. Carr বলেছেন, " Before you study the history study the historian. Before you study the historian study his historical and social environment." তাই তথ্যকে অনুধাবন করার আগে আমাদের উচিৎ ঐতিহাসিককে অনুধাবন করা।



     একজন ঐতিহাসিক নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলির সম্মুখীন হন তাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা - ব্যক্তিগত পক্ষপাত (Personal Prejidice or bias) ও গোষ্ঠীগত (Group) কারণ। প্রথম ভাগের মধ্যে আমরা কোনো একজন সভাকবির দ্বারা লিখিত ইতিহাস, রাজার দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত বা রাজার দ্বারা ভীত কোনো ব্যক্তির লিখিত ইতিহাস, নিজেকে নিয়ে বা নিজের পরিবারের কাউকে নিয়ে লিখিত কোনো ইতিহাসকে রাখতে পারি। রাজাকে নিয়ে তার সভাকবি যদি কোনো গ্রন্থ রচনায় ব্রতী হন তবে সেই গ্রন্থে তার প্রভুর(রাজা) আতিশয়্য  গুণগান করতে পারেন, এটা ভাবা অমূলক তো কিছু নয়। একই কথা রাজার দ্বারা ভীত, অত্যাচারিত কোনো লেখকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, এক্ষেত্রে ঐ লেখকের লেখায় ঐ রাজার ভালো কাজ চাপা পড়ে যেতেই পারে। আবার নিজেকে বা নিজের পরিবারের কাউকে নিয়ে লেখার সময় গুণগানের ফুলঝুড়িও ঝরতে পারে। কাজেই এই সমস্ত লেখাগুলির মাধ্যমে যে ইতিহাস বর্ণনা করা হচ্ছে সেইসব ইতিহাসকে আমরা নৈর্ব্যক্তিক বা বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস কি করে বলব? দ্বিতীয় কারণ অর্থাৎ গোষ্ঠীগত কারণের মধ্যে আমরা এক ধর্মগোষ্ঠীর, এক ভাষাগোষ্ঠীর, এক বর্ণগোষ্ঠীর, এক জাতিগোষ্ঠীর ইত্যাদির প্রভাবের কথা বলতে পারি যার দরুন ঐতিহাসিককের পক্ষে  অনেকসময় পক্ষপাতশূন্য ইতিহাস রচনা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। ধরাযাক, ঐতিহাসিক একজন হিন্দুধর্মের মানুষ, তিনি যদি হিন্দুধর্ম বিষয়ক কোনো গ্রন্থ রচনা করেন  তাতে তিনি হিন্দু ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় শ্রেষ্টত্বের মর্যাদা দেবার চেষ্টা করতেই পারেন। নিম্নবর্ণের কোনো লেখক তার লেখায় উচ্চবর্ণের কোনো মানুষকে সবসময় অত্যাচারিত বলে বর্ণনা দিতেই পারেন, ঐ উচ্চবর্ণের মানুষটির ভালোদিক থাকা সত্ত্বেও তা অস্বীকার করতেই পারেন। এইভাবে ইতিহাস রচনা যদি কেউ করে থাকেন তবে আর যাই হোক না কেন, ঐ ইতিহাস কখনোই সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক হতে পারে না । আসলে ঐতিহাসিকের সহজাত পূর্বসংস্কার, রুচি, শ্রেণীস্বার্থ তার তথ্য নির্বাচন ও ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করে। একজন ভারতীয় ঐতিহাসিক ভারতে ব্রিটিশদের কার্যকলাপকে যেভাবে দেখবেন একজন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক সেই কার্যকলাপকে নিশ্চই সেভাবে দেখবেন না। ভারতীয় ঐতিহাসিকদের চোখে জাতীয়তাবাদীরা নায়ক রূপে প্রতীয়মান হলেও ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা তাদের খলনায়কের তকমা দিতেই পারেন। আবার বলা যায়, একজন ঐতিহাসিক যে বিষয় নিয়ে গবেষণায় রত হন তা তিনি ভালোবেসেই গ্রহণ করেছেন এই মানসিক প্রবৃত্তির জন্য তিনি যে ইতিহাস রচনা করেন তাতে মন্ময়তার স্পর্শ তো থাকবেই। তাই ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিককে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ থাকতে হবে, তাকে আবেগ (Emotion), অনুভূতি (Felling), সহজাত প্রবৃত্তি (Instinct) প্রভৃতি থেকে যথাসাধ্য মুক্ত হয়ে ইতিহাস রচনায় ব্রতী হতে হবে।


     এবার একটু ইতিহাসের পরিধিটা (Scope) দেখতে চেষ্টা করব। প্রথমেই বলে রাখি এই স্বল্প পরিসরে ইতিহাসের সামগ্রিক পরিধিকে আলোচনা করা আমার সাধ্যাতীত। তবে এককথায় বলতে গেলে বলব, মানুষ যা করে, যা শোনে, যা ভাবে বা পরিকল্পনা করে সেই সবই ইতিহাসের পরিধিভুক্ত, আর যা করে না, শোনে না, ভাবে না সেগুলিকে ইতিহাসের পরিধিভুক্ত করা যায় না। চলুন ব্যাপারটাকে উদাহরণের সাহায্যে বুঝে নেওয়া যাক, সুদূর অতীতে যেসব যুদ্ধ হয়েছিল তা মূলত  ঢাল, তরোয়াল, বল্লম ইত্যাদি অস্ত্রের মাধ্যমে সম্পাদিত হত। তাই তখনকার যুদ্ধের ইতিহাসের বর্ণনা দিতে আমরা কখনই পারমাণবিক অস্ত্রের কথা তুলতে পারি না। আর সেইজন্যই প্রাচীনকালের ঐ যুদ্ধের ইতিহাসের পরিধিকে ঐ ঢাল, তরোয়াল, বল্লম- এগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তারপর সময়ের সহিত মানুষ নিজেকে আরও উন্নত করে তোলে, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে ফেলে আধুনিক মারাত্মক সব  অস্ত্রসস্ত্র, ফলে ইতিহাসের পরিধিও বৃদ্ধি পায়। আর তাই যুদ্ধের ইতিহাসে ব্যবহৃত অস্ত্রের পরিধি আর ঐ ঢাল, তলোয়ার, বল্লমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, তার মধ্যে ঢুকে পড়ে আধুনিক সব মারাত্মক অস্ত্রসস্ত্র, অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যখনই মানুষের কর্মের পরিধি বেড়ে যাচ্ছে তখন ইতিহাসের পরিধিও সম্প্রসারিত হচ্ছে। ইতিহাস হল একটি ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া, যার সবসময়ই নিজেস্ব একটা গতি বিদ্যমান। তাই মানুষ অতীতে যা করেছে তা আজকের ইতিহাসের বিষয়, আর আজ যা করবে তা ভবিষ্যতে ইতিহাসের বিষয়ভুক্ত হবে। ইতিহাস আজ তার আলোচনায় বিশ্ব মানবজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে; চিত্রিত করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্র-এ মানুষের অবদানকে, সে ক্ষেত্র সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি যাইহোক না কেন। ইতিহাস অতীত থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে শেষ হয়। বিভিন্ন ঘটনা যেমন- যুদ্ধ, বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, সম্রাট বা সুলতানদের সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য একইসাথে সাধারণ মানুষদের অবস্থা- এগুলিই সাধারণত ইতিহাসের বিষয়বস্তু। তবে ইতিহাসের সুবিশাল পরিধির মধ্যে আমরা আরও অনেক কিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করতে পারি; যেমন - সাহিত্যের ইতিহাস, সংস্কৃতির ইতিহাস, ভূগোলের ইতিহাস, দর্শনের ইতিহাস, ধর্মের ইতিহাস, শিল্পের ইতিহাস, সভ্যতার  ইতিহাস, গণিতের ইতিহাস, পদার্থবিদ্যার ইতিহাস, রসায়নবিদ্যার ইতিহাস, জীববিদ্যার ইতিহাস, পরমাণুর ইতিহাস, নভোমণ্ডলের ইতিহাস ইত্যাদি। এত বেশিরকমের বৈচিত্রপূর্ণ পরিধির জন্য  বর্তমানে ইতিহাস প্রায় সীমাহীন পরিধির অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।


     এবার একটু ইতিহাস ও বিজ্ঞানের মধ্যেকার সম্পর্কের দিকে নজর দেওয়া যাক। ইতিহাসে কোনো তথ্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য ঐতিহাসিক যেসব পদক্ষেপ নেন তার সূত্র ধরেই অনেকে ইতিহাসকে বিজ্ঞানের সমমর্যাদা দিতে উদগ্রীব হয়েছেন। তথ্যকে প্রতিষ্ঠা দেবার জন্য একজন ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, শ্রেণীবিভাব, সিদ্ধান্তস্থাপনের সাহায্য নিয়ে থাকেন, এগুলিকে বিজ্ঞান দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে থাকে, তাই এদিক থেকে ইতিহাসকে বিজ্ঞানের সমকক্ষ বলে গণ্য করা যেতেই পারে। বলাবাহুল্য, 'যুক্তিনির্ভর, পরীক্ষিত জ্ঞানই যদি বিজ্ঞান হয় তবে ইতিহাসও বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত, কারণ ইতিহাসের সব তথ্যই যুক্তিনির্ভর ও পরীক্ষিত সত্য'। যুক্তিবিহীন উদ্ভট কোনো তথ্য ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবার যোগ্য নয়। একজন ইতিহাস রচয়িতা  অর্থাৎ ঐতিহাসিক যে দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে  তথ্য বিশ্লেষণে ব্রতী হন তা বৈজ্ঞানিকের গবেষণার থেকে কোনো অংশেই কম নয়। ঐতিহাসিকের গবেষণাধর্মী মননশীলতা, প্রখর শ্রীধরশক্তি, বাস্তববাদিতা, পর্যাপ্ত বিচারবুদ্ধিমূলক জ্ঞান তাকে  বৈজ্ঞানিকের সমতুল্য করবে, এতে অবাক হওয়ার তো কিছু দেখছি না। তাই উপরোক্ত ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতের উপর দাঁড়িয়ে আমি বলব, ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলা যেতেই পারে। তবে একইসাথে বলতে চাইব, ইতিহাসকে বিজ্ঞান বললেও তাকে পুরোপুরি বিজ্ঞানের তকমা দেওয়া অনুচিত ও অমূলক; কেন  অনুচিত ও অমূলক তার কয়েকটি কারন নিচে প্রদর্শিত হল-


প্রথমত, ইতিহাসের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মানুষ ও তার কার্যাবলী, কিন্তু বিজ্ঞানের আলোচনার মূলে থাকে বস্তু।

দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানের কোনো সিদ্ধান্তকে জাতীয়-আন্তর্জাতিক সবক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রাধান্য পেতে দেখা যায়; কিন্তু ইতিহাসের ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বোঝানো যাক,- 'মাধ্যাকর্ষণের  টানেই উপরে ছোঁড়া কোনো বস্তু নিচে নেমে আসে'- বিজ্ঞানের এই সিদ্ধান্ত সর্বজনীন (Universal), এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিকমহলে দ্বিমতের অবকাশ নেই। কিন্তু ইতিহাসে কোনো সিদ্ধান্ত সর্বজনীন নাও হতে পারে। যেমন, সিন্ধু সভ্যতার অবক্ষয়ের কারণ নিয়ে ঐতিহাসিকমহলে বিতর্কের শেষ নেই; কেউ বলছেন বন্যা, কেউ বলছেন বহিঃশত্রুর আক্রমণ, কেউ বা বলছেন সিন্ধুবাসীদের রক্ষণশীল মনোভাব ঐ সভ্যতার অবক্ষয় ঘটিয়েছিল, অর্থাৎ এখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন ধরণের সিদ্ধান্ত করছেন।

তৃতীয়ত, ইতিহাসের মধ্যে ধর্ম, নৈতিকতার মত ব্যাপারগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানের মধ্যে এগুলির কোনো রকম ঠাঁই নেই।

চতুর্থত, ইতিহাসের ঘটনাগুলিকে পুনরায় যথাযথভাবে টেনে এনে প্রত্যক্ষভাবে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করা অসম্ভব, কিন্তু বিজ্ঞানে তা সাধ্যাতীত নয়। যেমন, 'শূন্য মাধ্যমে আলোর গতি সবচেয়ে বেশি'- এই সিদ্ধান্তটির সত্যাসত্য যাচাই করার জন্য কোনো বৈজ্ঞানিক নিজেও বিষয়টি পরীক্ষা করে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত স্থাপন করতে পারেন। কিন্তু ঐতিহাসিক তা পারেন না, যা অতীত তাকে পুনরায় বর্তমানে আনা যায় না।

পঞ্চমত, উভয়ের মধ্যে পরিধিগত একটা পার্থক্যও বর্তমান। ইতিহাসের পরিধি বিজ্ঞানের পরিধি অপেক্ষা অনেক ব্যাপক ও বৈচিত্রপূর্ণ।

     উপরিকথিত কারণগুলির জন্য আমরা ইতিহাসকে পুরোপুরি বিজ্ঞান বলতে পারি না, তবে অর্ধবিজ্ঞান বলতেই পারি; আর একইসাথে বলতে পারি সমাজবিজ্ঞান। মূলত সমাজবিজ্ঞান হল সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞান, এ সম্পর্ক সমাজে বসবাসরত ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, গোষ্ঠীর সাথে গোষ্ঠীর, গোষ্ঠীর সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। সমাজবিজ্ঞান সমাজে বসবাসরত মানুষের আচার-আচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা চালায়। বলাবাহুল্য, ইতিহাসও তাই করে থাকে ফলে ইতিহাসকে সমাজবিজ্ঞানের অভিধায় অভিহিত করাই সমীচীন।


     ইতিহাস কার্যকারণ সম্মিলিত একটা বিষয়। ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো কারণ অবশ্যই থাকবে। কোনো ঘটনার পেছনে ঠিক কি কারণ ছিল তার সন্ধান না করতে পারলে কখনোই ঐ ঘটনার যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। কেউ যদি এককথায় বলে দেয়, 'হিটলার চেয়েছিলেন তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল'- কথাটা ঠিক হলেও তা অতি সাধারণ, এর দ্বারা কিছুই ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেতে হবে আর তাহলেই হয়তো কোনো বিষয় সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান পাওয়া সম্ভব হতে পারে। একজন ঐতিহাসিকের উচিত কোনো বিষয়  সম্পর্কে অবিরত প্রশ্নে রত থাকা। তাই E.H.Carr বলেছেন, "The great historian- or parhaps I should say more broadly, the great thinker- is the man who asks the question 'why?' about new things or in new context." কোনো ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে হলে ঐতিহাসিককে সচেতনভাবে তার কাজকে চালাতে হবে। মূল কারণ যে সবসময় চোখের সামনে জ্বলজ্বল করবে, তা নাও হতে পারে; অনেকসময় তা লুকোনো অবস্থাতেও থাকতে পারে। তাই ঐতিহাসিককে কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতেই হবে। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাসও বলেছিলেন, গ্রিক-পারসিক যুদ্ধের কারণ তুলে ধরাও তার ইতিহাস রচনার একটি উদ্দেশ্য। হেরোডোটাসের মতই মন্তেস্কু, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকরাও ঘটনার কার্যকারণের উপর বেশি গুরুত্ব  আরোপ করার কথা বলেছেন। আসলে কার্যকরণকে সঠিকভাবে অনুসন্ধান না করলে ইতিহাস পূর্ণাঙ্গতা পেতে পারে না। কোনো একটি  ঘটনা ঘটবার পেছনে প্রতিটি কারণকেই ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের আওতায় আনবেন, শুধুমাত্র একটি কারণকে নিয়েই তিনি নিজের বিশ্লেষণকে সীমায়িত করে রাখবেন না। ইতিহাসে কার্যকারণ মূলত দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদঘাটিত হয়ে থাকে। যথা - ১) নিমিত্তবাদ ২) অপ্রত্যাশিত বা অলৌকিক ঘটনা।


নিমিত্তবাদ: নিমিত্তবাদে অলৌকিকতার কোনো স্থান নেই। মানুষের সকল কর্মের পেছনে রয়েছে লৌকিক কারণ, কোনো অলৌকিক বা দৈব কারণ নয়। এবিষয়ে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক,  ধরাযাক অমল এবং কমল দুজনেই খুব ভালো বন্ধু। একদিন সকালে অমল কমলকে সুপ্রভাত জানাতেই কমল  হঠাৎ তাকে কিছু কটুকাটব্য শুনিয়ে বিদায় নিল! এখন প্রশ্ন, কমলের অমলের প্রতি এরূপ বিরূপ আচরণের কারণ কি? নিমিত্তবাদ এর কারণ খোঁজার জন্য বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখবার চেষ্টা করবে।  শারিরীক বা মানসিক অসুস্থতা, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় কোনো সমস্যা বা ইচ্ছাকৃত কোনো মজা ইত্যাদির মধ্যে কোনটি ঐ আচরণের প্রকৃত কারণ তা জানার জন্য সব সম্ভাব্য কারণগুলিকে খুঁটিয়ে দেখে নিমিত্তবাদ, আর তারপরেই প্রকৃত কারণের দিকে অঙ্গুল নির্দেশ করে। নিমিত্তবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে E.H.Carr বলেছেন, "I hope uncontroversial-as the belief that everything that happened has  a cause or causes, and could not have happened different unless something in the cause or causes had also been different." অর্থাৎ, ঘটে যাওয়া সবকিছুরই এক বা একাধিক কারণ আছে এবং তা ততক্ষন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে যতক্ষণ না ঐ কারণ বা কারণাদির পরিবর্তন হচ্ছে। ইতিহাসে এই প্রক্রিয়াই ঐতিহাসিকদেরকে কোনো ঘটনার যথার্থ কারণের খোঁজ দিতে বেশি সাহায্য করে।

অলৌকিকতাবাদ: এবার অলৌকিকতাবাদের কথা আলোচনা করা যাক। অলৌকিক ও কল্পনার পথ ধরে কোনো কার্যের কারণকে ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করে অলৌকিকতাবাদ।  স্বভাবতই এই প্রক্রিয়ার সূত্র ধরে যে কারণের প্রতি নির্দেশ করা হবে তা উদ্ভট হতে বাধ্য। যেমন- এই প্রক্রিয়ানুসারে বলা হয়, ১৯২৩ সালের এক যুদ্ধে ট্রটোস্কির পরাজয়ের কারণ হেমন্তকালে হাঁস শিকার করতে গিয়ে অসুস্থতায় পড়া। বলাবাহুল্য, এই ধরণের কারণে বস্তুনিষ্ঠতা থাকার সম্ভবনা কম। তবে এই প্রক্রিয়া কম গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি ইতিহাসের কার্যকারণকে  কমবেশি প্রভাবিত করতে সক্ষম।


     এবার প্রশ্ন হল, ইতিহাস আমরা কেন পড়ব? এর উত্তরে বলব, 'History is for human self knowledge'. এর মাধ্যমে আমরা স্বীয় প্রকৃতিকে জানতে পারি। মানুষ কি করতে পারে সে সম্পর্কে আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান সঞ্চার করা ইতিহাসের কাজ। আর তাই আমেরিকানদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ ফরাসি বিপ্লবীদের মনে অধিকার আদায়ের জন্য বিদ্রোহ করার শক্তি জুগিয়েছিল বা ধীরে ধীরে অব-উপনিবেশায়নের ধারণা জোরদার হতে শুরু করেছিল। বর্তমানকে ভালোভাবে জানতে হলে, বুঝতে হলে আমাদেরকে ইতিহাসের সাহায্য নিতেই হবে। আবার ইতিহাস আমাদের অতীতের করা ভুল থেকেও সাবধান করে। আর সেই কারণেই আজকাল পারমাণবিক বোমা ফেলা নয় বরং বোমা ফেলার ফাঁকা হুমকি দেওয়া হয়, কারণ হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার বারাবারিতে নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার ধ্বংসাত্মক স্মৃতির কথা আজও মানুষে মনে সতেজ রয়েছে। বিভিন্ন দেশের  মানুষের একটা সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করে ইতিহাস  এবং এর মাধ্যমে একদেশের মানুষ অন্যদেশের মানুষের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।  ইতিহাস আমাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করতে এবং তার মাধ্যমে একটা উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। শঙ্করাচার্য, বুদ্ধ, রাম, মহারাণাপ্রতাপ, গুরুনানক, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী দয়ানন্দ, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ বিভিন্ন সন্ত, সমাজসংস্কারক ও নায়কদের জীবনাদর্শ তথা তাদের বাণী ও নীতি আধুনিক  সমাজের প্রতিটি মানুষকেই সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, নি:স্বার্থ হতে প্রেরণা দেয়, একইসাথে তা মানুষের চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটাতে, তার মধ্যে বিশ্লেষণী ভাবধারার সঞ্চার করতে, তাকে যুক্তিবাদী হবার মন্ত্রে দীক্ষিত হতেও সাহায্য করে। ইতিহাস আমাদের রাজনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক কর্মের বিকাশ সাধন এবং প্রশাসনিক সংস্কারেও সাহায্য করে থাকে। জনসাধারণের স্বার্থে কোন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে? কোন ধরণের শাসনব্যবস্থা জনগণ সমর্থন করবে?- ইত্যাদির জ্ঞান অর্জন বর্তমানের নেতা নেত্রীদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। তাই আমি(সুমন্ত ঘোষ) মনে করি, এক্ষেত্রে তাদেরকে ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখতেই হবে। অতীতে যে ধরনের শাসনব্যবস্থা জনগণের মনে বিতৃষ্ণা ধরিয়েছিল সেই ধরনের শাসনব্যবস্থাকে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা কখনোই পুনরায় জনগণের সামনে আনতে চাইবে না। ইতিহাস মানেই অতীতের বিবরণ; সে বিবরণ হল রাজনৈতিক , সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক , ধর্মীয় প্রভৃতি ক্ষেত্রের বিবরণ। এককথায় ইতিহাস হল, 'একটা সংরক্ষণের ভান্ডার যা অতীতকে সংরক্ষণ করে রাখে। ইতিহাস আছে বলেই আমারা অতীতের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাই, বর্তমানের চোখে যেন ফেলে আসা পূর্বের অতীতকে দেখতে পাই। অতীতের কার্যাবলী বর্তমানে আলোচিত হবার মাধ্যমেই অতীত যেন বর্তমানের মধ্যে চির সজীব হয়ে থাকে।'

Reference:
১) What is History - E.H.Carr
২) Defining History - Robert Milton Underwood, Jr
৩) Concept of History - Pallavi Talekau, Dr. Jyotrimayee Nayak, Dr. S.Harichandan
৪) ইতিহাসের ধারা - সুশোভন সরকার
৫) ইতিহাসতত্ব - ড. এম. দেলওয়ার হোসেন
৬) পশ্চিমের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক - সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়
৭) ইতিহাস ও ঐতিহাসিক (ইতিহাস পরিচিতি) - ড. মোঃ শামসুজ্জামান
৮) অধ্যাপক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়) মহাশয়ের ক্লাস লেকচার।

****আমার লেখাগুলি ভালো লাগলে Comment করুন*** : নিবেদনে-
সুমন্ত ঘোষ


Comments

  1. বরতমান ভারতের ইতিহাস চরচায় আলোচনা করলে ভালো হয়।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

আদি সমাজতন্ত্র বাদী বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র লেখক- সুমন্ত ঘোষ

সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে শর্ট প্রশ্ন

১   ) হিট্রো - গ্রাফি   কথার   অর্থ   কি                                                                         উত্তরঃইতিহাস   চর্চা ২ )  ইতিহাসের   জনক কাকে বলে                                                                        উত্তরঃহেরোডোটাস ...

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কতটা 'বৈপ্লবিক' ছিল? লেখক: সুমন্ত ঘোষ

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন।  বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ...