Skip to main content

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জাপানে অ্যাটম বোমার ধ্বংসলীলা



১৯৪৫ সালের ৬ ই আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে জাপানের হিরোশিমা নগরীতে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা। এর ঠিক তিন দিন পরে, ৯ই আগস্ট বেলা ১১টা ২ মিনিটে, আমেরিকা জাপানের নাগাসাকি শহরে আরো একটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। প্রথম বোমাটির নাম দেওয়া হয় ‘লিটল বয়’ বা ‘বামন বোমা’ এবং দ্বিতীয়টির নামকরণ করা হয় ‘ফ্যাটম্যান’ বা ‘স্থুলকায় বোমা।



এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। খুব অল্প সংখ্যকই বেঁচে আছে। তেমনি একজন বলেছেন সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘প্রথমে মনে হল, আকাশ থেকে যেন একটা কালো প্যারাস্যুট নেমে আসছে। পরমুহূর্তেই আকাশ যেন জ্বলে উঠল। আলোর সেই ঝিলিক যে কী রকম তা বলার সাধ্য কারও নেই। সেই সঙ্গে প্রচ- শব্দ। বিস্ফোরণের পরমুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়তে লাগলো শত শত ভবন ও হাজার হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে আশপাশের জিনিসপত্র এদিক ওদিক পড়ে জমা হতে থাকল। চারিদিকে আলো ও অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। হামাগুড়ি দিয়ে বেরোতে হল, কালো ঘোর অন্ধকারে। বাতাসে বীভৎস গন্ধ। মানুষের মুখের চামড়া যেন ঝুলে পড়েছে। কনুই থেকে আঙুল অবধি হাতের চামড়া ঝুলে পড়ছে। কাতরাতে কাতরাতে ঝর্ণা আর নদীর দিকে ছুটে চলেছে অসংখ্য মানুষ। সারা দেহে অসহ্য জ্বালা। চারিদিকে অসংখ্য মানুষের মৃতদেহ পড়ে আছে। মৃতের শরীরে কাপড়-জামা প্রায় কিছুই নেই। গায়ের কাপড়গুলো জ্বলে গেছে। নদীর তীরের কাছে একজন নারী আকাশের দিকে মুখ করে পড়ে আছে। বুক দুটো তার উপড়ানো, সেখান থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে। ঘণ্টা দুয়েক পর আকাশ একটু ফিকে হয়ে গেল। ঝলসে যাওয়া হাত দুটো থেকে হলুদ কষ গড়ে পড়ছে। স্কুলের মেয়েরা কাতরাচ্ছে আর চিৎকার দিয়ে কাঁদছে মাগো মাগো বলে। ভয়ংকরভাবে পুড়ে গেছে তারা, সারা শরীরে রক্ত গড়াচ্ছে কাতরভাবে। মাকে ডাকতে ডাকতে একে একে দেহগুলো নিথর হয়ে যাচ্ছে।’ 
সুত্র:  
আইনস্টাইন, পারনাণবিক বোমা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সফিক, পোস্ট নং:71

***এই ব্লগ পত্রিকায় লেখা পাঠানোর জন্য ও পুরষ্কার সংক্রান্ত নির্দেশনামার জন্য ক্লিক করুন:
http://itihasoitihasik.blogspot.in/2018/01/blog-post_46.html

Comments

Popular posts from this blog

আদি সমাজতন্ত্র বাদী বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র লেখক- সুমন্ত ঘোষ

সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে শর্ট প্রশ্ন

১   ) হিট্রো - গ্রাফি   কথার   অর্থ   কি                                                                         উত্তরঃইতিহাস   চর্চা ২ )  ইতিহাসের   জনক কাকে বলে                                                                        উত্তরঃহেরোডোটাস ...

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কতটা 'বৈপ্লবিক' ছিল? লেখক: সুমন্ত ঘোষ

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন।  বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ...