'সিনেমার শুটিং চলছে একটি গ্রামের ভিতর। খড়ের গাদায় আগুন লেগেছে। জ্বলছে পুরো গ্রাম। সেই আগুনের ভিতর দিয়ে ছুটে আসছেন সিনেমার প্রধান অভিনেত্রী।' - ক্যামেরায় যখন এই দৃশ্য ধারণ হচ্ছে তখন হঠাৎ করেই বাতাসের গতি পাল্টে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রধান অভিনেত্রী আটকে পড়েন আগুনের বৃত্তে। হইচই পড়ে যায় ইউনিটে। কেউ সাহস পান না তাকে উদ্ধার করার। এমন সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছবিটির অন্যতম প্রধান অভিনেতা। বাঁচান নায়িকাকে। কিন্তু নিজে আহত হন। হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির শুটিংয়ে এই ঘটনা ঘটে। যে সিনেমায় তারা অভিনয় করেছিলেন মা ও ছেলের ভূমিকায়(নার্গিস এবং সুনীল দত্ত)!
'মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালের ২৫ অক্টোবর। এপিকধর্মী এই ছবিতে অভিনয় করেন নার্গিস, রাজকুমার, সুনীল দত্ত ও রাজেন্দ্রকুমার। ‘বলিউড-মোগল’ মেহেবুব খানের এই ছবি শুধু নার্গিসের ক্যারিয়ারে সর্বশ্রেষ্ঠ কাজই নয়, হিন্দি ছবির শতবর্ষের ইতিহাসেরও এক মাইলফলক এটি।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দেশপ্রেমমূলক ছবি তৈরির হিড়িক পড়ে বলিউডে। প্রযোজক-পরিচালক মেহেবুব খান পরিকল্পনা করেন তিনি ভারত-মাতা বা দেশমাতৃকার রূপ তুলে ধরবেন রূপকের মাধ্যমে। তিনি যখন শ্বাশত ভারতীয় নারীর আত্মত্যাগ ও মহিমা রুপালি পর্দায় চিত্রিত করার পরিকল্পনা করেন তখন নার্গিস ছিলেন হিন্দি ছবির জগতে শীর্ষস্থানীয় নায়িকা। স্বাভাবিকভাবেই তাই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র রাধার ভূমিকায় তার নামই প্রস্তাবিত হয়।
‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির গল্প আবর্তিত হয় রাধা নামে এক দরিদ্র ভারতীয় নারীর জীবনকে ঘিরে। রাধা এক গ্রামীণ গৃহবধূ। দরিদ্র হলেও তার সুখের সংসার। স্বামী শামু (রাজকুমার) এবং চার সন্তানকে নিয়ে তার জীবন। কিন্তু কৃষক শামু দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়লে তার জীবনে অমানিশা ঘনিয়ে আসে। নিজের পঙ্গুত্বকে সংসারের বোঝা বলে মনে করে একদিন গৃহত্যাগ করে শামু। স্বামী পরিত্যক্তা সুন্দরী রাধার দিকে লোভের হাত বাড়ায় গ্রামের ধনী মহাজন। শত অভাব, অনাহার সত্ত্বেও মহাজনের কুপ্রস্তাবে রাজি হয় না রাধা। তার ছোট দুটি সন্তানের অকাল মৃত্যু ঘটে। দুই কিশোর ছেলে রামা ও বিরজুকে নিয়ে কৃষিকাজ চালিয়ে যায় রাধা।
এই ছবির একটি স্মরণীয় দৃশ্য হলো, গরুর পরিবর্তে ভারবাহী পশুর মতো রাধা নিজেই লাঙল টানার মুহুর্তটি। দুই ছেলে বড় হয়। রামা (রাজেন্দ্রকুমার) শান্ত ও বাধ্য হলেও প্রতিবাদী বিরজু (সুনীল দত্ত) হয়ে ওঠে ডাকাত। অন্যায়ের প্রতিবাদে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ডাকাত সন্তানের সঙ্গে সংঘাত বাধে নীতিনিষ্ঠ মায়ের। শেষ পর্যায়ে বিরজুকে নিজে হাতে গুলি করে মারে মা রাধা।
১৯৫৭ সালে মুক্তি পেল ‘মাদার ইন্ডিয়া’। ছবিটি ইতিহাস সৃষ্টি করে। নার্গিসের জীবনে এটি বয়ে আনে প্রভূত সম্মান ও সাফল্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো পুরস্কারই প্রায় বাদ থাকে না। সুনীল দত্ত, রাজকুমার ও রাজেন্দ্র কুমারের ক্যারিয়ারও গতি পায় এই ছবির দৌলতে।
সুত্র: ইন্টারনেট
(সংগৃহীত)
Comments
Post a Comment