Skip to main content

ভিনগ্রহী স্থাপত্য


এখনও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাচীন কালের এমন সব স্থাপত্য রয়েছে, যার ইতিহাস আংশিক জানা সম্ভব হলেও নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনও আঁধারে আজকের বিজ্ঞান। কোনো কোনো স্থাপত্যের ক্ষেত্রে তো সম্পূর্ণই অন্ধকারে ইতিহাসবিদেরা। কিন্তু পৃথিবীর বুকে এখনও মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেসব রহস্যময় স্থাপনা!স্থাপত্যগুলো ইতিহাস, নির্মাণশৈলী এবং প্রযুক্তিসহ অনেক রহস্যই শতাব্দীর পর শতাব্দী গোপন রেখে উপহাস করছে আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানকে। ভিনগ্রহে প্রাণ রয়েছে বলে যারা বিশ্বাস করেন তাদের দাবি, আদি সভ্যতা যদি উন্নত না হয়েই থাকে তবে এসব স্থাপত্যের পেছনে অবশ্যই বুদ্ধিমান কোনো জাতির হাত রয়েছে।

তাই মূলত তাদের বিশ্বাস, এসব স্থাপত্যের পেছনে জড়িত রয়েছে এমন কোনো প্রযুক্তি যে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। পৃথিবীর এমনই কিছু রহস্যময় স্থাপত্য নিয়ে পরিবর্তনের ধারাবাহিক আয়োজন।
ইস্টার আইল্যান্ড: প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্বে আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির ২শ’ মাইল পশ্চিমে রয়েছে রহস্যময় এক দ্বীপ! নাম ইস্টার আইল্যান্ড। পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলির মধ্যে অন্যতম! দ্বীপটিতে কারা বসবাস করতো এবং কেনই বা সেখানে মানব সভ্যতা বিলীন হয়ে গেল সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি। তবে দ্বীপটিকে ঘিরে সবচেয়ে বড় যে রহস্য রয়ে গিয়েছে তা হচ্ছে প্রায় ৯শ’ পাথরে গড়া মানব আকৃতির মুর্তি।

সেই মুর্তিগুলোকে মোরাই নামে ডাকা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে রাপা নুরি নামক এক উপজাতি মুর্তিগুলো তৈরি করেন। কিন্তু পাথর কেটে কোন উদ্দেশ্যে আদিবাসীরা প্রায় হাজার খানেক বিশাল আকারের মানব মুর্তি নির্মাণ করলো তা আজও রহস্য হয়েই রয়েছে।
তবে কথিত আছে, ১৭২২ সালে অ্যাডমিরাল জ্যাকব রগেইন ইস্টার সানডের দিন দ্বীপটি আবিস্কার করেন বলে এর নাম রাখা হয় ইস্টার আইল্যান্ড। অনেকটা দুর্ঘটনাবশতই দ্বীপটি তারা আবিস্কার করে ফেলেন। তাও আবার সাগরে ভাসমান অবস্থায় তারা দূর থেকে দ্বীপটিতে দাঁড়িয়ে থাকা মুর্তিগুলোকে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কৌতুহলী হয়ে সেখানে যান। প্রথম দিকে এসব মুর্তিগুলোকে মানুষ মনে করলেও দিনের আলোতে অভিযাত্রীদের সেই ভুল ভাঙ্গে।

তাই সে সময় দ্বীপটিতে থাকা স্থানীয়দের মুর্তিগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর তারা পাননি। অর্থাৎ মুর্তিগুলোকে কারা তৈরি করেছিল, সে সম্পর্কে আদিবাসীরাও জানতো না। তবে সেগুলোকে তারা নিয়মিত দেবতা জ্ঞানে পূজা করতো।
সে সময়েই অ্যাডমিরাল জ্যাকবের মনে প্রশ্ন জাগে, পাথর কুঁদে মুর্তিগুলো গড়তে যে পরিমাণ সময় ও জনবল দরকার ছিল তা এলো কোথা থেকে। তাছাড়া সমুদ্রের বুকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটিতেই বা এত বিপুল পরিমাণ পাথর কিভাবে এলো। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে যারাই এই অসাধ্য সাধন করুক না কেনো, উদ্দেশ্য কি ছিল?
এইসব প্রতিটা মুর্তিকেই একটি বিশেষ দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার মনে প্রশ্নের সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকে। অবশ্য পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরাও এই প্রশ্নের কোনো যুক্তি নির্ভর উত্তর খুঁজে বের করতে পারেননি।  

কিছু গবেষকদের ধারণা, দ্বীপটির রাপা নুই আদিবাসীরা এসব মুর্তি নির্মাণ করেছিল। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। এর মাঝে যে প্রশ্নটি রহস্যের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তা হচ্ছে, মুর্তিগুলোর আকৃতি মানুষের মতো মনে হলেও আদতে তা নয়। এদের মাথার খুলি লম্বাটে। চেহারার আকৃতিও মানুষের মতো নয়।
এইরুপ এই আগ্নেয়গিরিময় দ্বীপটিতে দাঁড়িয়ে থাকা মুর্তিগুলোর শুধু মাথাগুলোই জেগে রয়েছে। দীর্ঘদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, শুধু মাথাগুলোই সম্ভবত গড়া হয়েছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানীরা মুর্তিগুলোর মাটি খুঁড়ে দেখতে পান আসলে শুধু মাথা নয়, পুরো শরীরই রয়েছে সেখানে। যার দৈর্ঘ্যই প্রায় ২০ ফুট। অবশ্য দ্বীপটিতে পাওয়া সবচেয়ে বড় মুর্তিটির দৈর্ঘ্য তার চেয়ে অনেক বেশি।
তবে বর্তমানে দ্বীপটিতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৪শ’ মুর্তি নিয়ে এখনও গবেষণায় বিজ্ঞানীরা। কিন্তু রহস্যের জট রয়েই গেছে। গবেষকদের মতে, দ্বীপের আগন্তুকদের অভ্যর্থনা কিংবা ভয় দেখাতে এমন মুর্তি গড়েছিল স্থানীয়রা। আদতেই কি তাই?

তবে এলিয়েন বিশ্বাসীদের দাবি, মহাকাশ থেকে আসা ভিনগ্রহীদের অভ্যর্থনা জানাতে এমন মুর্তি গড়া হয়েছিল। যার পেছনে ছিল মহাজাগতিক প্রযুক্তি। তাদের মতে, অদ্ভূত মুর্তিগুলোও কোনো মানুষের নয়! দেবতা হিসেবে যাদের মান্য করা হতো সেই এলিয়েনদের আকৃতি অনুসরণ করেই তৈরি করা হয় এসব মুর্তি।

ভি. ডানিকেনের মতো এলিয়েন বিশ্বাসীদের দাবি, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান জাতির আগমন ঘটেছে। তবে যেসব অঞ্চলে তাদের অবস্থান এবং যাতায়াত বেশি ছিল তার মধ্যে ইস্টার আইল্যান্ড অন্যতম।

তথ্য দানে : পরিবর্তন ডট 

Comments

Popular posts from this blog

আদি সমাজতন্ত্র বাদী বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র লেখক- সুমন্ত ঘোষ

সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে শর্ট প্রশ্ন

১   ) হিট্রো - গ্রাফি   কথার   অর্থ   কি                                                                         উত্তরঃইতিহাস   চর্চা ২ )  ইতিহাসের   জনক কাকে বলে                                                                        উত্তরঃহেরোডোটাস ...

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কতটা 'বৈপ্লবিক' ছিল? লেখক: সুমন্ত ঘোষ

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন।  বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ...