চেতনা সিনহা: ব্যাংক গড়ে যিনি বদলে দিয়েছেন ভারতের গ্রামীণ নারীদের ভাগ্য
কথায়বলে, আর্থিক স্বাধীনতা সবথেকে বড় স্বাধীনতা। ভারতের নারীরা এখনও যে সেই স্বাধীনতা পুরোপুরি পেয়েছে তা বলা চলে না। কিন্তু সেই স্বাধীনতা অর্জন করতে প্রাণপাত পরিশ্রম করছেন, এমন নারীর সংখ্যা এদেশে নেহাত কম নেই। ছোটোখাটো যা হোক, ব্যবসা বা কোনো কাজ করে তারা তিল তিল করে নিজেদের আর্থিক স্বক্ষমতাকে বাড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু সামান্য অর্জিত অর্থকে যে তারা সবসময়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন তাও নয়। ঘরে মাদকাসক্ত স্বামী সেই টাকা কেড়ে নেন; আবার এত কম সেই অর্থ যে তাকে ব্যাংকে রাখাও বেশ কষ্টকর ব্যাপার। অন্যদিকে, কিছু ধার করে যে ব্যবসাটা বড় করে রোজগারটাকেও বাড়াবে, সেটাও কার্যত অসম্ভব; কারণ, ওই সামান্য পুঁজির ব্যবসার জন্য পয়সা দিতে রাজি নয় বেশিরভাগ অর্থ সংস্থাই।
তাহলে কোথায় যাবেন এই নারীরা যারা স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখেন কিন্তু স্বপ্নে পৌঁছানোর পথ খুঁজে পান না? আছে, তাদেরও ভরসা করার মানুষ রয়েছে আমাদের মধ্যে।ইউএন যারা তাদের অদম্য মনের জোরে ও ইচ্ছায় অসংখ্য মানুষের জীবনেও এনেছেন এক ইতিবাচক পরিবর্তন।
আজ আমরা বলব এমন একজন নারীর কথা, যিনি দেশের গ্রামীণ নারীদের কঠোর পরিশ্রম করে গড়ে তোলা উদ্যোগকে দিয়েছেন এক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সাফল্যের রূপ। তিনি চেতনা সিনহা- নানা অসুবিধার মধ্যেও গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করতে যিনি নানা ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়ে তাদের জীবনে এনেছেন এক সত্যিকার বদল। চেতনাদেবী ১৯৯৭ সালে মহারাষ্ট্রের মাসোয়াদে তৈরি করেন তার 'মান দেশি' ব্যাংক, যার মুখ্য উদ্দেশ্য শুধুমাত্র গ্রামীণ নারীদের ঋণ দেওয়া নয়, তাদের সুবিধা অনুযায়ী সেই ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করাও। ব্যবসায়িক উদ্যোগের ন্যূনতম চাহিদাটুকু মেটাতেও গ্রামের নারীদের ঋণ দিয়ে থাকে চেতনা সিনহার ‘মান দেশি' আর্থিক সংস্থা। লক্ষ্য একটাই: ভারতের গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন।
ঠিকা শ্রমিক, পশুপালন বা চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা নারী- সবার পাশেই দাঁড়িয়েছে চেতনা দেবীর 'মান দেশি' ব্যাংক। মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক রাজ্যে আটটি শাখা এবং ১৪০ জন ফ্যাসিলিটেটর-এর মাধ্যমে তিন লক্ষেরও বেশি বেশি নারীর কাছে আজ পৌঁছে গিয়েছে 'মান দেশি'।
মান দেশি শুধুমাত্র একটি ব্যাংক নয়। এই সকল নারীর চাহিদা মিটিয়ে তাদের ক্ষমতায়ন এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানোও আমাদের লক্ষ্য।
তিন লক্ষেরও বেশি বেশি নারীর কাছে আজ পৌঁছে গিয়েছে 'মান দেশি'; Imager Source: Changemakers
ঊনষাট বছর বয়সী চেতনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মুম্বাই শহরে। পড়াশোনা মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে। সত্তর ও আশির দশকে বড় হয়ে ওঠা চেতনাদেবী একসময়ে আকৃষ্ট ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণের সাম্যবাদী রাজনীতির প্রতি; তাই বরাবরই তার সমাজসেবার দিকে ঝোঁক। তার অক্লান্ত সমাজসেবার জন্যে চেতনাদেবী আজ দেশ-বিদেশে এক বহু প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব। পেয়েছেন নানা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এবছরের গোড়ায় সুইজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামেও তিনি আমন্ত্রিত হন।
শহুরে জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে চেতনা পশ্চিম মহারাষ্ট্রের খরাপ্রবণ এলাকায় কৃষিকাজে মনোনিবেশ করতে গিয়ে রুক্ষ বাস্তবিক সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হন। আর্থিক সমস্যা তো বটেই, দেখেন গ্রামের নারীদের উদ্যোগের ন্যূনতম সম্মানটুকুও কেউ দেয় না। তখনই তিনি ঠিক করেন কিছু একটা করে এর বিহিত করবেন।
কিন্তু ঠিক কী ঘটনা থেকে তার 'মান দেশি' তৈরি করার অনুপ্রেরণা এল?
শোনা যাক চেতনাদেবীর ভাষাতেই,
আমার কাছে একবার একটি গ্রামের নারী এসেছিল পরামর্শ চাইতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্যে। নারীটি ঠিক সাহায্য চাইতে আসেনি; তার প্রধান লক্ষ্য ছিল পয়সা জমা করে নিজের পরিবারের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা। তখনই দৈনিক মজদুরি করা এই সমস্ত নারীদের প্রয়োজন মেটাতে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার কথাটা আমার মনে জাগে।
তবে এমনিতেই চেতনাদেবীর মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি। প্রথমে তিনি লাইসেন্সই পাননি সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমন সংস্থা খোলার জন্য, কারণ, যাদের তার ব্যাংক ঋণ দেবে, তাদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত। প্রথমে তিনি একটু মুষড়ে পড়লেও গ্রামের নারীরাই তাকে ভরসা যোগায় তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে। এমনকি, তারা চেতনাদেবীকে অনুরোধ করেন তাদেরকে শিক্ষিত করে তোলার জন্যও। অবশেষে সদিচ্ছার জয় হয় এবং সকলের মিলিত প্রয়াসে তৈরি হয় চেতনা সিনহার অনন্য 'মান দেশি' ব্যাংক। লক্ষ ছয়েক টাকার পুঁজি দিয়ে শুরু হওয়া 'মান দেশি'র পথ এবং আকাঙ্ক্ষা আজ ঊর্ধ্বমুখী- নিরন্তর তার প্রয়াস সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের হিতসাধনে।
স্বল্পমেয়াদি অথবা দীর্ঘমেয়াদি; এমনকি মাত্র ৫,০০০ টাকার ঋণও আজ দিয়ে থাকে 'মান দেশি' ব্যাংক এবং পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সুবিধাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে এই ব্যাংক। গয়না গচ্ছিত রেখেও এই নারী ক্রেতারা এই ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারেন।
চেতনাদেবী এটাও মাথায় রেখেছেন যে, দৈনন্দিন শ্রমে যাদের জীবনযাপন, তাদের যেন ব্যাংকে টাকা জমা রাখার কারণে একটি দিনও নষ্ট না হয় কারণ একটি দিনের আয়ও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। "এমন নারীদের কথা মাথায় রেখে আমরা ঠিক করেছি তারা নিজেরা যদি ব্যাংকে আসতে না পারেন, ব্যাংকই তাদের কাছে যাবে পরিষেবা দিতে," বললেন বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট এই সমাজকর্মী।
জীবনের নানা লড়াইতে জয় পাওয়া নাছোড়বান্দা এই সমাজকর্মীর কথায়,
জীবনে জেতার জন্যে পাঁচটি উপাদান খুব প্রয়োজনীয়: কাজের প্রতি আবেগ, ধৈর্য, অধ্যাবসায়, শোনার ইচ্ছে এবং নম্রতা।
চেতনাদেবীর মনে করেন,
একজন নারীর দায়িত্ব তার নিজের জন্যে এবং পরিবারের জন্যে কিছু করেই শেষ হয়ে যায় না। আমরা নারীকে অনুপ্রেরণা দেই সমাজের বদলের কাজে এগিয়ে আসার জন্য। আমরা অনেকটাই পথ পেরিয়েছি কিন্তু আরও পথ পেরোনো বাকি।
'মান দেশি'র উদ্যোগে আজ বহু গ্রামীণ নারী, যারা আগে পরিশ্রম করলেও আর্থিক অনিশ্চয়তায় ভুগতেন, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন, স্বনির্ভর হয়েছেন। তাদের জীবনে এই বড় পরিবর্তনের কৃতিত্ব যদি কেউ পেয়ে থাকেন, তবে তিনি চেতনা সিনহা এবং তার বৈপ্লবিক 'মান দেশি' ব্যাংক।
ইউএন উইমেন-এর পূর্ণ সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে যারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে বিশ্বের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে দেশকে এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...
ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন। বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ...
Comments
Post a Comment