Skip to main content

রেনেসাঁস শিল্পকলার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য কি ছিল ?

দ্যা বার্থ অফ ভেনাস , source: Wikipedia

রেনেসাঁস বা নবজাগরণ ইউরোপে এক নতুন ধরনের সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল । এই সমাজ ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠ অবদান ছিল শিল্পের ক্ষেত্রে । বত্তিচেল্লি, মাইকেল এঞ্জেলো, রাফায়েল, দোনাতেলা, দা ভিঞ্চি প্রমূখ শিল্পীরা ছিলেন রেনেসাঁস শিল্পের সঙ্গে জড়িত । রেনেসাঁ শিল্পের লক্ষ্যে মানবতাবাদের কথা বলেছিল এবং ক্লাসিক যুগ বা ধ্রুপদী যুগের গাম্ভীর্য প্রথা ও একঘেয়েমিকে পেছনে ফেলেছিল । ল্যান্ডস্কেপের ব্যবহার, দিগন্তের নতুন নতুন আঙ্গিক, ফর্মের বাস্তবতা প্রভৃতি দেখা গিয়েছিল। 


রেনেসাঁস শিল্প যথার্থই secular বা ধর্মনিরপেক্ষ  ছিল কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে । অন্তত রেনেসাযুগের পেইন্টিং বা চিত্রকলার উপর খ্রিস্ট ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । প্রধানত এই প্রভাবেই আলোচ্য পর্বে শিল্পে অঙ্কিত হয়েছিল ক্রুশবিদ্ধ যীশু, পিতেতা, ম্যাডোনা, বিভিন্ন খ্রিস্ট ধর্মীয় সম্পদের প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য ধর্মীয় দৃশ্য । অবসর পাশাপাশি বহু ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক দৃশ্যও দেখা যায়। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল দৈনন্দিন জীবনের বহু চিত্র, অসমস্যা সুন্দর বা নিতান্তই সাধারণ দর্শনীয় নরনারীর প্রতিকৃতি প্রভৃতি । 


রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাসঙ্গিকতার ব্যবহার। আকবর সঙ্গে সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়কে এত নিখুঁতভাবে উপস্থাপিত করা হতো যে ছবি সচল হয়ে উঠতো । কেটে যেত জড়ত্ব । যে জড়ত্বকে তাকে অনেকে 'বাইজেন্টিয় জড়ত্ব' বলেছেন । মূলত জত্তো, মিকেলাঞ্জেলা প্রমুখী চিত্রকলা তে এই বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে লক্ষণীয় । 


নারী ও পুরুষের সম্পূর্ণ নগ্নতার স্বীকৃতি আলোচ্য পর্বের শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । রেনেসাঁ যুগে সৃষ্ট ভেনাস ছিলেন সৌন্দর্যের দেবী । ইনি এবং অন্যান্য রূপসীরা, অভিজাতরা এবং স্বাস্থ্যবান সুপুরুষগণ প্রায় অধিকাংশই প্রতিকৃতিতে বিবস্ত্ররূপে আবির্ভূত । বিদগ্ধ এবং রসিকের দৃষ্টিতে ছবিগুলি আদৌ কামোদ্দীপক নয় । এগুলি সরল, নিষ্পাপ, নিরাভরণ অথচ স্বর্গীয় সুষমামন্ডিত । বত্তিচেল্লির "Birth of Venus" এই প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । 


রেনেসাঁস স্থাপত্যের ক্ষেত্রে প্রাচীন বিভিন্ন রীতি যথা গ্রীক, ডোরিক, আইওনীয় প্রভৃতি রীতি সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । শুধু চার্চ বা উপাসনালয় নয় আলোচ্য পর্বে ইতালীয় গৃহ ও প্রাসাদ নির্মাণেও এই রেনেসাঁস স্থাপতি অনুষ্ঠিত হয়। 


রেনেসাস শিল্পের আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যাঙ্কন, রং -এর প্রয়োগের মাধ্যমে আলো, তেল রঙের ব্যবহার প্রভৃতি । আবার অলংকারের ব্যবহার ও সৌন্দর্যের সৃষ্টি ছিল রেনেসাঁস শিল্পের অন্যতম বড় একটি বৈশিষ্ট্য । এই বৈশিষ্ট্যের একটা বড় প্রকাশ আমরা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা চিত্রটির মধ্যে দেখতে পাই । 

Comments

Popular posts from this blog

আদি সমাজতন্ত্র বাদী বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র লেখক- সুমন্ত ঘোষ

সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে শর্ট প্রশ্ন

১   ) হিট্রো - গ্রাফি   কথার   অর্থ   কি                                                                         উত্তরঃইতিহাস   চর্চা ২ )  ইতিহাসের   জনক কাকে বলে                                                                        উত্তরঃহেরোডোটাস ...

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কতটা 'বৈপ্লবিক' ছিল? লেখক: সুমন্ত ঘোষ

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন।  বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ...