রেনেসাঁস বা নবজাগরণ ইউরোপে এক নতুন ধরনের সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল । এই সমাজ ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠ অবদান ছিল শিল্পের ক্ষেত্রে । বত্তিচেল্লি, মাইকেল এঞ্জেলো, রাফায়েল, দোনাতেলা, দা ভিঞ্চি প্রমূখ শিল্পীরা ছিলেন রেনেসাঁস শিল্পের সঙ্গে জড়িত । রেনেসাঁ শিল্পের লক্ষ্যে মানবতাবাদের কথা বলেছিল এবং ক্লাসিক যুগ বা ধ্রুপদী যুগের গাম্ভীর্য প্রথা ও একঘেয়েমিকে পেছনে ফেলেছিল । ল্যান্ডস্কেপের ব্যবহার, দিগন্তের নতুন নতুন আঙ্গিক, ফর্মের বাস্তবতা প্রভৃতি দেখা গিয়েছিল।
রেনেসাঁস শিল্প যথার্থই secular বা ধর্মনিরপেক্ষ ছিল কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে । অন্তত রেনেসাযুগের পেইন্টিং বা চিত্রকলার উপর খ্রিস্ট ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । প্রধানত এই প্রভাবেই আলোচ্য পর্বে শিল্পে অঙ্কিত হয়েছিল ক্রুশবিদ্ধ যীশু, পিতেতা, ম্যাডোনা, বিভিন্ন খ্রিস্ট ধর্মীয় সম্পদের প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য ধর্মীয় দৃশ্য । অবসর পাশাপাশি বহু ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক দৃশ্যও দেখা যায়। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল দৈনন্দিন জীবনের বহু চিত্র, অসমস্যা সুন্দর বা নিতান্তই সাধারণ দর্শনীয় নরনারীর প্রতিকৃতি প্রভৃতি ।
রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাসঙ্গিকতার ব্যবহার। আকবর সঙ্গে সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়কে এত নিখুঁতভাবে উপস্থাপিত করা হতো যে ছবি সচল হয়ে উঠতো । কেটে যেত জড়ত্ব । যে জড়ত্বকে তাকে অনেকে 'বাইজেন্টিয় জড়ত্ব' বলেছেন । মূলত জত্তো, মিকেলাঞ্জেলা প্রমুখী চিত্রকলা তে এই বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে লক্ষণীয় ।
নারী ও পুরুষের সম্পূর্ণ নগ্নতার স্বীকৃতি আলোচ্য পর্বের শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । রেনেসাঁ যুগে সৃষ্ট ভেনাস ছিলেন সৌন্দর্যের দেবী । ইনি এবং অন্যান্য রূপসীরা, অভিজাতরা এবং স্বাস্থ্যবান সুপুরুষগণ প্রায় অধিকাংশই প্রতিকৃতিতে বিবস্ত্ররূপে আবির্ভূত । বিদগ্ধ এবং রসিকের দৃষ্টিতে ছবিগুলি আদৌ কামোদ্দীপক নয় । এগুলি সরল, নিষ্পাপ, নিরাভরণ অথচ স্বর্গীয় সুষমামন্ডিত । বত্তিচেল্লির "Birth of Venus" এই প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ।
রেনেসাঁস স্থাপত্যের ক্ষেত্রে প্রাচীন বিভিন্ন রীতি যথা গ্রীক, ডোরিক, আইওনীয় প্রভৃতি রীতি সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । শুধু চার্চ বা উপাসনালয় নয় আলোচ্য পর্বে ইতালীয় গৃহ ও প্রাসাদ নির্মাণেও এই রেনেসাঁস স্থাপতি অনুষ্ঠিত হয়।
রেনেসাস শিল্পের আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যাঙ্কন, রং -এর প্রয়োগের মাধ্যমে আলো, তেল রঙের ব্যবহার প্রভৃতি । আবার অলংকারের ব্যবহার ও সৌন্দর্যের সৃষ্টি ছিল রেনেসাঁস শিল্পের অন্যতম বড় একটি বৈশিষ্ট্য । এই বৈশিষ্ট্যের একটা বড় প্রকাশ আমরা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা চিত্রটির মধ্যে দেখতে পাই ।
Comments
Post a Comment