বিজ্ঞানের মাঝেই আমাদের বসবাস। সকালে ঘুম থেকে জাগার পর রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমরা যা কিছুই করি না কেন, বিজ্ঞান ছাড়া অসম্ভব। এমনকি ঘুমকেও বাদ দেয়া যাবে না বিজ্ঞান থেকে। বিজ্ঞান কোন কিছুকে ব্যাখ্যা করে, সেটা বিশ্লেষণ করে, তত্ত্ব-উপাত্ত যাচাই করে এবং গ্রহণযোগ্য একটা সিদ্ধান্ত দেয়। এই সিদ্ধান্তগুলোই আবিষ্কার হিসেবে মানুষের কাছে পৌঁছায়। এছাড়াও, যতক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞান কোন কিছুর প্রমাণ দেয় না, ততক্ষণ পর্যন্ত তা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে না।
বিজ্ঞান পড়ার ৪টি প্রয়োজনীয়তা:
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি চিন্তা ও দক্ষতাকে উত্সাহিত করে: বিজ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে চিন্তা করা এবং তা পরীক্ষা করা। চিন্তা এবং পরীক্ষার এই পদ্ধতিই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। যার শুরুটা হয় একটি চিন্তায় এবং শেষ গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্তে। একজন মানুষ গড়ে প্রায় ৭০ হাজার চিন্তা করতে পারে প্রতিদিন। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১টি করে চিন্তা। এই চিন্তাগুলো যে কোন সময় একটা রেনেসাঁ হতে পারে, কিন্তু তার জন্য দরকার চিন্তার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত ও এর বাস্তবায়ন। আর এই সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার [১] ভেতরেই নিহিত রয়েছে। এটা ছাড়াও, শুধুমাত্র শেখার আগ্রহও তৈরি করতে পারে বিজ্ঞান। পৃথিবীর সবকিছুই কোন না কোন ভাবে বিজ্ঞানের সাথে জড়িত। যে কারণে, বিজ্ঞানের কোন একটি বিষয় নিয়ে পড়তে গেলে, কিংবা গবেষণা করতে গেলেও অন্যান্য বিষয়গুলো চলে আসে। এতে যেমন জানার পরিধি বাড়ে, তেমনি কাজের দক্ষতাও বাড়ে।
শেখার জন্য বিজ্ঞান ভালোবাসার এক চরণভূমি: দর্শন আর বিজ্ঞানের পথচলা হাত ধরাধরি করে। যেদিন থেকে দর্শনের শুরু, সেদিন থেকেই বিজ্ঞানের যাত্রা। দর্শন আমাদের প্রশ্ন করতে শেখায়, বিজ্ঞান তার উত্তর দেয়। মানুষ প্রকৃতি থেকে শিখতে পছন্দ করে, প্রশ্ন করতে পছন্দ করে, প্রশ্নের উত্তরের জন্য পথ খুঁজে। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান থেকে পাওয়া যায়। যেসব উত্তর থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে আসে ‘ওয়াও’। আর যেহেতু বিজ্ঞানের সাথে যে কোন বিষয়েরই যোগসাজেশ আছে, তাই বিজ্ঞান পড়লে অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন চলে আসবে, তেমনি অন্যান্য বিষয় অধ্যয়ন করতে গেলেও অবধারিতভাবে বিজ্ঞান চলে আসবে। বিজ্ঞানকে তাই যদি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়, তবে অন্যান্য বিষয়গুলোও অস্পষ্ট থেকে যায়। এছাড়া নতুন নতুন বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে, প্রশ্ন করতে চাইলে বিজ্ঞান হতে পারে তার সেরা একটা মাধ্যম।
বিভিন্ন বিষয় শেখার সোপান: বিজ্ঞানের জন্য নিজেকে তৈরি করা মানে অন্যান্য বিষয়গুলোতেও নিজেকে যোগ্যতর করে তোলা। আধুনিক এই যুগে একাধিক বিষয়ে জ্ঞান না থাকার অর্থ হচ্ছে কয়েক দশক পিছিয়ে থাকা। চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলে এটা বেশি পরিলক্ষিত হয় যে, শিক্ষাগত কারণে আমাদের যে বিষয়গুলো পড়া হয়, তার বাইরেও অনেক প্রশ্ন থাকে। সেই বিষয়গুলোতে অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় পিছিয়ে থাকতে হয়। বিজ্ঞান এই জায়গাতেও আমাদের সাহায্য করতে পারে। একবার কোন বিষয় বুঝতে সক্ষম হবার পর, বর্তমানে সেই একই বিষয় কিভাবে এখন [২] বুঝা যায় তার একটা তুলনামূলক চিত্র [৩] পাওয়া যাবে যদি বিজ্ঞানে আগ্রহ থেকে থাকে। এভাবেই বিজ্ঞান আমাদের ইতিহাস পড়ার দিকে ধাবিত করে। সেই ইতিহাসকে [৪] ক্রিটিক করতে উৎসাহিত করে।
ভবিষ্যতের জন্য তৈরি: আমাদের জীবনের ভিত্তি পুরোটাই নির্ভর করে আছে বিজ্ঞানের উপর। কৃষিবিজ্ঞান যোগান দেয় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, কিভাবে সেই খাবার উৎপাদিত হবে তা নিশ্চিত করে। চিকিৎসাবিজ্ঞান সুন্দর সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে। রসায়নবিজ্ঞান চিকিৎসার জন্য ঔষধের যোগান দেয়। পদার্থ আর গণিত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আমাদের নিয়ে যায়। এমনকি আমাদের বসার জন্য চেয়ার, ঘুমানোর জন্য খাট, পড়ার জন্য টেবিল ইত্যাদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদি কেমন হবে সেটাও বিজ্ঞান দ্বারা নির্ধারিত। পরবর্তি প্রজন্মের জন্য এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন তারা বিজ্ঞানে শুধু স্বাচ্ছন্দ্য না, পারদর্শীও হয়।
***এই ব্লগ পত্রিকায় লেখা পাঠানোর জন্য ও পুরষ্কার সংক্রান্ত নির্দেশনামার জন্য ক্লিক করুন:
Comments
Post a Comment