মমি আমরা প্রায় সকলেই দেখেছি বই এর পাতায় কিংবা হলিউড এর ছবিতে। চলুন আজ আমি আপনাদেরকে এই মমি সৃষ্টি এর ইতিহাস বলি। প্রাচীন মিশরে এর উত্থান ঘটেছিল। প্রথম দিকে মিশরীয়রা বলিতে গর্ত করে মৃতদেহ গুলিকে চাপা দিত। রোদে, তাপে, বালির শুষ্কতার জন্য তা শুকিয়ে যেত। এ পদ্ধতি কিছু দিন পর গেল পালটে, শুরু হল মৃতদেহ সত্কারের এক নতুন পদ্ধতি, যা প্রথমে উচ্চশ্রেণীর জন্য এবং পরে সর্বসাধারনের জন্য চালু হয় আর এই সময় থেকেই ধাপে ধাপে গডে ওঠে মমি।
মিশরীয়রা মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে অধিক প্রধান্য দিতেন, তারা "কা" এবং "বা" এই দুই সওাতে বিশ্বাস করতেন যারা মৃতের শরীরে অবস্থান করে, তাই মৃত শরীরের ষৌষ্ঠব বজায় রাখা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল যাতে ঐ সওারা মৃত্যুর পরও নিজের শরীরকে চিনতে পারে। মমি তৈরির পেছনে মূলত এই চিন্তাই কাজ করত। মনে রাখবেন আলোচনা করলে আরও করা যেত কিন্তু আমি চাইছি সংক্ষেপে যথা সম্ভব গুরুতপূর্ণ তথ্য আপনাদের কাছে পরিবেশন করতে যাতে সহজেই তা মনে রাখা যায়।
চলুন এবার কিভাবে মমি হত তা আলোচনা করি। মৃতদেহ গুলি যাতে পোচে না যায় তার জন্য উপায় অবলম্বন করা হত। যেমন, তার মস্তিষ্ক থেকে মগজ বার করে নেওয়া হত। এই মগজ নাকের ছিদ্র বা ঘাডের উপরের অংশ বা চোখের ভেতর দিয়ে এক ধরনের নল বিশিষ্ট বাটালি বা ঐ রকম কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে বের করা হত। পেটের মূলত বাঁ দিকটা কেটে যকৃৎ, ফুসফুস, পাকস্থলি, অন্ত্র বের করে আনা হত এবং সেগুলিতে নানা গন্ধ দ্রব্য বা মশলা বা উদ্ভিজ তেল কেটে ভরে দেওয়া হত এৰং এগুলি পুনরায় পেটে ভরে দেওয়া হত। আবার অনেক সময় তা ক্যানপিক জারে ভরে মৃতের পা এর কাছে মমির কফিনের মধ্যে রাখা হয় বা প্যাকেটেও ভরে রাখা হত। আবার শরীরের উপর তেল লাগানোর রীতিও ছিল। শরীরকে শুকানোর জন্য তারা ন্যাটরনের ব্যবহার করতেন। এক্ষেত্রে শরীরকে ঐ ন্যাটরনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হত এবং লিনেনের কাপড় দিয়ে ঐ শরীরটিকে মুরে ফেলা হত। হাত গুলো বুকের ওপর X আকৃতিতে বা শরীরের দু-পাশে লম্বা ভাবে রাখা হত। আসলে মিশরীয় রাজবংশ গুলির পরিবর্তনের সাথে সাথে মমিকরণের পদ্ধতিও পরিবর্তন হচ্ছিল।
মমি তৈরির সময় মন্ত্রপূত নানা কবচ মৃতের শরীরের উপর রাখা হত। হৃৎপিন্ডের উপর আবার একটা গুবরে পোকা রাখা হত, যা হত পূণর্জীবনের প্রতিক এবং যা মৃত্যুর পর মানুষের অনন্ত শোকহীন জীবন লাভে সাহায্য করে। তারপর শরীরটিকে লিনেনর কাপড়ে ভালো ভাবে জড়িয়ে কফিনের মধ্যে রাখা হত। প্রাচীন মিশরীয়দের বিশ্বাস, মৃতদেহের উপর যে সব ঔষধ-তৈলাদি লেপন করা হয় সেগুলি দেবতাদের চোখের জল থেকে তৈরি। ওসিরিসের মৃত্যুতে শোকাগ্রস্ত দেবপরিবার যে অবারণ অশ্রুপাত ঘটিয়েছিল, সেই অশ্রু থেকে সৃষ্টি হয়েছে এসব সুগন্ধি যা মৃত শরীরের উপর লেপন করা হত। মৃত মানুষ এইসব সুগন্ধির স্পর্শে দেব শকতিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে বলে তারা মনে করত।
কারা এই মমি তৈরি করত চলুন সেদিকে একটু নজর রাখি। যারা মমি তৈরির সাথে যুক্ত থাকত তদেরকে আমরা মোটামুটি তিন ভাগেভাগ করতে পারি, যথা- Scribe, Cutter ও Undertaker। প্রথম শ্রেণীর লোকেরা মমিকরণ প্রক্রিয়া ঠিকভাৰে হত কি না, তা তদারকির কাজ করত। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকেরা মূলত মমিকে কাটার কাজে যুক্ত ছিলেন, তবে এরা মিশরীয় সমাজে নিম্ন পর্যায়ভুক্ত ছিল। শেষ শ্রেণীতে যারা ছিল তারা মমি তৈরি করত। এরা সমাজে ব্যাপক মর্যাদার অধিকারি ছিল। এরা মমি তৈরির সময় শেয়ালের মাথাওয়ালা মুখোশ পরে থাকত। কারন মিশরীয়দের দেবতা অ্যানুবিয়াস যিনি সাধারণত মমির সাথে যুক্ত তার মাথাটা শেয়ালের মত। তাই যে মমি তৈরি করত তাকে তখন অ্যানুবিয়াস হিসাবে কল্পনা করা হত ও ঐ ব্যক্তিকে শেয়ালের মুখোশ পরিহিত অবস্থায় কাজটি করতে হত।
*** যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য কিছু বানানের অসংগতির দেখা দিয়েছে, যার কারণে আমি দুঃখিত।
*** যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য কিছু বানানের অসংগতির দেখা দিয়েছে, যার কারণে আমি দুঃখিত।
খুবই ভালো লাগল ।
ReplyDeleteধন্যবাদ।