Skip to main content

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ

ভারতমাতা অনেক বিশিষ্ট সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ | ড. রাধাকৃষ্ণাণ ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন একজন মহান দার্শনিক এবং শিক্ষাব্রতী, কিন্তু জীবনে চলার পথে তাঁকে ভারতের রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হতে হয়েছে |

মহাজ্ঞানী তপস্বী সাধক রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন যে, " আমাদের এই জীবন হল সাধনার জন্য | সাধনার পথেই জীবন উৎসর্গ করা প্রয়োজন | " তিনি সাধনাকেই নিজের জীবনের মূলমন্ত্র বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন |
এছাড়াও রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন যে, " আমরা আমাদের আরাধ্য দেবতাকে যেমন কখনোই কোনো অশুদ্ধ, নোংরা অশুচি জিনিস নিবেদন করি না, ঠিক তেমনই আমরা, অশুদ্ধ -অশুচি আত্মা আমাদের ভগবানের কাছে নিবেদন করতে পারি না | ভগবানের চরণে আত্মাকে নিবেদন করতে হলে তা শুদ্ধ করে নিতে হবে | তবেই তা হবে নিবেদনের জন্য যোগ্য | তবেই তা হয়ে উঠবে পবিত্র | "
রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন, জীবনে চলার পথে মানুষকে নানা চড়াই উৎরাই, ব্যথা - বেদনা, দুঃখ -কষ্ট প্রভৃতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় | এরই নাম জীবন | এই পথে চলতে চলতে কখনো হতাশ হয়ে পড়তে নেই | দুঃখকে কখনো জীবনের শাস্তি বলে মনে করতে নেই | বরং বলা যেতে পারে দুঃখের মধ্য দিয়েই আমরা জীবনের চরম শিক্ষা পেতে পারি | যার দ্বারা আমরা নিয়মানুবর্তিতা
শিখতে পারি | শাস্তি থেকেই নিয়মানুবর্তিতার জন্ম. |
রাধাকৃষ্ণাণের মতে ভগবানের সঙ্গে নিভৃত আলাপ সব সময় মানুষের কাঙ্খিত হওয়া প্রয়োজন | আর সেই পথ একমাত্র সুগম হয় উপাসনার মাধ্যমে | আমরা মনে করি যে দেবতার উপাসনা করার একমাত্র উপায় হল উপবাস ও প্রা্র্থনা | কিন্তু ড. রাধাকৃষ্ণাণ উপবাস ও প্রার্থনা কে দেবতা আরাধনের একমাত্র পথ বলে মনে করেন না | তাঁর মতে ভগবতে নিবিষ্ট মনই হল পূজার একমাত্র আধার আর অনুতপ্ত হৃদয়ই হল সেই পূজার একমাত্র উপকরণ | অনুতাপের ফলেই মানুষের মনে যে দুঃখ হয়, তার কারণে যে অশ্রুসজল নয়ন,তার দ্বারাই একমাত্র পবিত্র মনে পূজা করা সম্ভব | এর ফলেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় |
তরুণ দের প্রতি ছিল রাধাকৃষ্ণানের তীক্ষ্ণ নজর | কারন তিনি জানতেন যে তরুণরাই হল দেশের ভবিষ্যৎ | তিনি তরুণদের জন্য অনেক কথা, অনেক আদর্শ তুলে ধরেছেন তাঁর " My Search of Truth " শীর্ষক গ্রন্থে | তিনি সবসময় ছাত্র ছাত্রীদের পাশে থাকার কথা বলেছেন | তিনি বলেছেন তাঁর জীবনের একটাই ইচ্ছা, তিনি যেন সর্বদা দেশের তরুণ তরুনীদের সঙ্গে থাকতে পারেন | তিনি যেন তাদের নীতিধর্ম শিক্ষা দিতে পারেন | আর এছাড়াও তিনি ছাত্রদের চরিত্র গঠনের জন্য জোর দেন আধ্যাত্মিকতার সাধনার দিকে | কারণ তিনি মনে করতেন যে একজন মানুষ তখনই সর্বতোভাবে পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যখন সে নিজেকে আত্মীক ভাবে বলীয়ান করে তুলতে পারে |
রাধাকৃষ্ণানের দর্শন সম্বন্ধে মতবাদ বিশ্বের বিশিষ্ট জনের কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে | দর্শন সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান সমুদ্রের মতো বিশাল অনন্ত | তাঁর মতবাদের সারমর্ম লিপিবদ্ধ করা আছে " An Idealist view of life " নামক গ্রন্থে |
বিলাতের বিখ্যাত এক অধ্যাপক. Prof. C.E.M. Joad. এই গ্রন্থ প্রসঙ্গে ' Spectator. ' নামক পত্রিকা লিখেছিলেন যে, সমগ্র বিশ্বে এমন কোনো গ্রন্থ এখনও মুদ্রিত হয়নি, যেখানে ধর্মকে এত সুন্দর করে উপস্থাপিত করা হয়েছে এবং যা মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে | এমনকি রাধাকৃষ্ণাণ বর্তমান যুগকেও ধর্মের সাহায্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সমালোচনা করেছেন | এছাড়াও এই গ্রন্থে বর্তমান যুগকে আবেগ দিয়ে বিচার করতে শেখানো হয়েছে |
এই ধর্মগ্রন্থ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পাঠ করে বলেছিলেন যে, এই ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থটি যথেষ্ট মৌলিক এবং এটি মানুষের কাছে এক অমূল্য রত্ন | এর বাচন ভঙ্গি পাঠকের মন কেড়ে নেয় এবং এই লেখা দেখে বোঝাই যায় যে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণাণ কতটা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন |

(পাপাই শিকদার)

Comments

Popular posts from this blog

আদি সমাজতন্ত্র বাদী বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র লেখক- সুমন্ত ঘোষ

সমাজতন্ত্রবাদ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক মতবাদ শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে কয়েকজন খ্যাতনামা সমাজতান্ত্রিক এর আবির্ভাব হয় । এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ ব্যবস্থার যেখানে সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং সকলের শ্রম থেকে পাওয়া আয় সকলের মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টন করা হবে। মূলত এই মতবাদ প্রচলিত গণতন্ত্রবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে যৌথ বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করে সেটাই সমাজতন্ত্রবাদ । সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে তত্ত্বগত মতভেদ আছে। মাক্স পূর্ববর্তী সমাজতন্ত্রবাদীদের আদি সমাজতন্ত্র বাদী বলা হয়। যাদের utopian বা অবাস্তব আদর্শবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি কাপড়ের কলের ম্যানেজার। ম্যানেজার হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু factory প্রথার যাবতীয় কুফল দেখে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি সাধনে তার জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিউ ল্যানার্কে একটি আদর্শ শিল্পনগর স্থাপন করে শ্রমিক সাধারণের সর্বপ্রক...

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে শর্ট প্রশ্ন

১   ) হিট্রো - গ্রাফি   কথার   অর্থ   কি                                                                         উত্তরঃইতিহাস   চর্চা ২ )  ইতিহাসের   জনক কাকে বলে                                                                        উত্তরঃহেরোডোটাস ...

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কতটা 'বৈপ্লবিক' ছিল? লেখক: সুমন্ত ঘোষ

ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব যে কত দূর পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত এই সময় মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধিতসা সত্বেও বিজ্ঞানচেতনা যে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল তা বলতে একটু দ্বিধা বোধ হয়। কারণ এইসময় বৈজ্ঞানিকগন জগৎ ও বিশ্বভ্রম্মান্ড নিয়ে আলোচনা করলেও তারা সেগুলির যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অনেক সময় অক্ষম হতেন। তবে উল্লেখ করা দরকার গ্যালিলিও, কোরারনিকাস- এ সম্বন্ধে কিছু যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছিলেন।  বৈজ্ঞানিক বিপ্লব 'বৈপ্লবিক' পর্যায়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটা বাধা লক্ষ্য করতে পারি, সেটা হলো বৈজ্ঞানিকগণের অনেকাংশই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করত। তারা মনে করত জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল প্রায় সমর্থক। মূলত এই ধারণাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবকে বৈপ্লবিক ধারায় রূপান্তরের পরিপন্থী ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমরা একজন ব্যতিক্রমী মনীষীকেউ দেখতে পারি যিনি তার আবহাওয়া সংক্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা এই ভ্রান্ত জ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষশাস্ত্রের অসারতার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছিলেন। ইনি আর কেউ নন, ইনি হলেন রেনেসাঁ...